পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় : ইটার কাত্যায়ন, পরাশর ও ভরদ্বাজ গোত্রীয় শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১১ সহায়ে আশু সমরে বিজয়-গৌরব অৰ্জ্জন করিলেও ইহা তাহার মনঃপুত ছিল না, পাছে এই গ্রন্থের ব্যবস্থা প্রচলিত হয়, এই ভয়ে মরণের পূৰ্ব্বে তিনি উহা অগ্নিসাৎ করেন। গ্রন্থকার জয়কৃষ্ণ রঘুপতির দ্বিতীয় পুত্র রুদ্রপতির অন্যতম পৌত্রের নাম জয়কৃষ্ণ তর্কবাগীশ । ইনি জ্যেষ্ঠতাত রঘুদেবের ন্যায় গঙ্গাতীরে গিয়া অষ্টোত্তর শত সংখ্যক পুরশ্চরণ করিয়া সিদ্ধিলাভ করেন। অনেক লোক তাহার মহিমায় আকৃষ্ট হইয়া তদীয় শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়াছিল। তিনি হইয়া গিয়াছেন। গ্রন্থকার হরিকান্ত ইহার অন্যতম পৌত্রের নাম হরিকান্ত ন্যায় বাগীশ । ইনিও একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ও গ্রন্থকার ছিলেন; তিনি ন্যায় শাস্ত্রীয় “হেত্বাভাসের টীকা" “দুর্গোৎসব পদ্ধতি", ও (সেৰ্ব্বদেবদেবী সমন্বিত স্বগীয় বিষহরী দেবীর) "নৌকাপূজা পদ্ধতি” প্রণয়ন করেন। এ সকল গ্রন্থ মুদ্রিত হয় নাই এবং তদীয় পৌত্রের নিকট এখনও আছে। হরিকান্ত হেড়ম্বাধিপতি ও তৎপরে বেহারাধিপতির সভাপণ্ডিত পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। যোগী ভ্রাতৃযুগল ইহাদের সহোদর ভ্রাতা রতিকান্ত যোগী পুরুষ ছিলেন। শেষ জীবন তিনি বারাণসী ধামে অতিবাহিত করেন। রাজঘাটের পূৰ্ব্বদিকে তাহার ইষ্টকময় সাধনাশ্রমটি পুঠিয়ার জনৈক রাণী প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। ইহার কনিষ্ঠ সহোদর উমাকান্ত অতিশয় বলশালী ও অসীম সাহসী পুরুষ ছিলেন, তিনি একদা একটি বন্য মহিষ ধৃত করিয়া আনিয়া একহস্তে শৃঙ্গধারণ পূৰ্ব্বক কালীর পদে বলি দিয়াছিলেন । সতী ভবানী উমাকান্তের স্ত্রীর নাম ভবানী দেবী । ভবানী পতি-ব্রত-রতা তপস্বিনী ছিলেন। তাহার করতলে কয়েকটি সুলক্ষণ যুক্ত চিহ্ন ছিল। তিনি গৃহকৰ্ম্মে দক্ষা ও “বার-ব্রত" পালনে অনুরক্তা ছিলেন। তাহার স্বামী যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত, তিনি মনে মনে স্বামীর রোগের পরিণাম বুঝিতে পারিয়া নিরুদ্বেগে পূৰ্ব্ব হইতেই প্রস্তুত হইতে ছিলেন। উমাকান্ত একজন গুপ্ত সাধক ছিলেন। এক একাদশী তিথি উদ্‌যাপনের পর তিনি ব্রতাঙ্গ ব্রাহ্মণ ভোজন ও কুটুম্ব ভোজনাদি করাইয়া চির বিদায় জন্য প্রস্তুত হইলেন। "গঙ্গা-গীতাগায়ত্ৰী” বলিতে বলিতে তাহার বাকশক্তি রোধ হইয়া আসিল । পত্নী পদ-প্রান্তে উপবিষ্টা, একবার তৎপ্রতি দৃষ্টি প্রক্ষেপ পূৰ্ব্বক যেন কি উপদেশ দিলেন, সতীর চক্ষে অশ্রুবারি ঝরিতে লাগিল, আরও একবার যেমন "গুরু-গঙ্গা-কাশী" বলিলেন, আমনি ব্রহ্মরস্ত্র ভেদ করিয়া উমাকান্তের প্রাণবায়ু উৎক্রান্ত হইল। ভবানী দেবী সীমান্তে সিন্দুর বিন্দু দিয়া শেষ সাজে সজ্জিত হইয়া আসিলেন এবং জনে জনে আত্মীয় স্বজনের নিকট বিদায় প্রার্থনা করিলেন। তাহার দার্ট্য ও আৰ্ত্তি দর্শনে কেহই “না" বলিতে পারিল না, সকলেরই চক্ষু জলপূর্ণ হইয়া উঠিল, সতী হাসিতে হাসিতে পরিতর চিতাশয্যায় আরোহণ করিয়া পাতিব্রাত্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ প্রদান করিলেন।