পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : চৌয়ালিশ ও ইটার সিদ্ধ বং শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৪৫ তাহার প্রধান গায়ক ছিলেন। ইহারা তিনজনই শ্ৰীমহাপ্রভুর অনুষঙ্গী এবং তাঁহার প্রেমামৃত সাগরে ডুবিয়া রহিয়াছিলেন; কাজেই ইহাদিগকে সংসারত্যাগী বলাই সঙ্গত। সংসার ত্যাগী হইলেও গোবিন্দ ঘোষকে শ্ৰীমহাপ্রভুর ইচ্ছায় বিবাহ করিতে হইয়াছিল, সে কথার উল্লেখ ইতিপূৰ্ব্বেই" করা গিয়াছে; কিন্তু তাহার বংশধর কেহ নাই। বাসুঘোষ ও মাধব ঘোষ বিবাহ করেন নাই। তবে শ্রীহট্টে অন্যত্র “বাসুদেব বংশ" বলিয়া যাহারা পরিচয় দেন, অদ্রপ পরিচয় দিবার তাহাদের ভিত্তি কোথায়? শঙ্কর ঘোষের কথা f রাঢ়দেশের কুলাই গ্রামবাসী শুকদেব ঘোষ ও তাহার দ্বিতীয় পুত্র দনুজারির নাম করিয়াছি, দনুজারির পুত্রের নাম শঙ্কর ঘোষ, শঙ্কর বাল্যকালে পিতৃহীন হইয়া মাতুল কর্তৃক বৰ্দ্ধমানের অন্তর্গত কুলীন গ্রামে তদীয় গৃহে নীত হন ও সেই স্থানেই প্রতিপালিত হন। কুলীন গ্রামের গুণরাজ খাঁ ও রামানন্দ বসুর নাম বঙ্গীয় বৈষ্ণব সমাজে ও সাহিত্যিক গণের নিকট অপরিচিত নহে; এই বৰ্দ্ধিষ্ণু বসুবংশীয় ভক্ত বাণীনাথ বসু, বাসুদেব ঘোষ প্রভৃতির বিশেষ পরিচিত ও বন্ধু ছিলেন। শঙ্কর কিছু বড় হইলে বাণীনাথ তাহাকে সঙ্গে লইয়া নবদ্বীপে গমন করিয়াছিলেন। বাণীনাথেরই চেষ্টায় শঙ্কর স্বীয় পিতৃব্য বাসুদেব ঘোষের সহিত সম্মিলিত হন এবং তদবধি তাহার নিকট অবস্থিতি করেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু সন্ন্যাস অবলম্বন করিয়া নীলাচল গমন করিয়াছিলেন, তথা হইতে বৃন্দাবন গমন ব্যাপদেশে গৌড়ে আগমন করিলে শঙ্কর তাহার দর্শন প্রাপ্ত হন ও কৃপালাভে কৃতাৰ্থ হন। এই সময় শ্ৰীমহাপ্রভু বাসুদেবকে বলেন, “শঙ্কর তোমার পালিত পুত্র রূপে খ্যাত হইবে; এবং তোমার অপর ভ্রাতৃবংশও তোমারই বংশ বলিয়া কথিত হইবে।” শ্ৰীমহাপ্রভুর এই বাক্য মূলে কংসারি দনুজারি ও এবং মীনকেতনের বংশীয়গণ “বাসুঘোষ-বংশ" বলিয়া খ্যাত হইয়াছেন। কংসারি এবং মীন কেতনের বংশীয়গণ কুলাই গ্রামে, তন্নিকটবৰ্ত্তী জগদা নন্দপুরে ও বৈষ্ণবতলা গ্রামে এবং মুর্শিদাবাদের রসোড়া, যশোহরের রামনগর ও দিনাজপুরে বাস করিতেছেন। দিনাজপুরের রাজ বংশ ও রায় সাহেব বংশ বাসুঘোষ বংশেরই শাখা। যাহা হউক, শঙ্কর ঘোষ পিতৃব্য বাসুদেবের উপদেশ অনুসারে ভক্তি শাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেন, এবং পিতৃব্য ত্রয়ের ন্যায়ই সঙ্গীত শাস্ত্রে পারদর্শিতা প্রাপ্ত হন। তিনি অতি দক্ষতার সহিত “ডম্প" বাদ্য করিতেন এবং তদ্বারাই শ্ৰীমহাপ্রভুকে প্রতিদান করিয়াছিলেন। “ডম্প" বাদ্য সহকারে সঙ্গীত করিয়া শঙ্কর যে শ্ৰীমহাপ্রভুর করুনা অৰ্জ্জন করেন, ইহা ভক্ত সমাজে একটা স্মরণীয় কথা রূপে খ্যাত হইয়াছিল। শঙ্কর ঘোষের পরিচয় প্রসঙ্গে এইজন্য এই কথাই “বৈষ্ণব বন্দনা" গ্রন্থে উল্লেখিত হয়, যথা— “বন্দিব শঙ্কর ঘোষ অঙ্কিঞ্চন রীতি । ডম্পের বাদ্যেতে যেবা প্রভুর কৈল প্রীতি।” শ্ৰীমহাপ্ৰভু যখন নীলাচলে, শঙ্কর ঘোষ তখন সেস্থানেও যাইতেন। যখন গৌড়ীয় ভক্তগণ নীলাচলে গিয়া বাঙ্গালা কীৰ্ত্তন গানের তরঙ্গ তুলিতেন; তখন পিতৃব্যগণ সহ শঙ্করও সেই সঙ্গীতে তান ধরিতেন। ইনিও একজন উল্লেখযোগ্য গায়ক ছিলেন, তাই গোবিন্দ কবিরাজ কৃত পদে ইহার নামও, নীলাচলে গৌরাঙ্গ-সঙ্গীত প্রসঙ্গে উল্লেখিত হইয়াছে, যথা— ৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশে ৩য় ভাগ ২য় খণ্ড ১ম অধ্যায়ে দেখ।