পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রিশ] করিলেন, ঋষিবর, এক্ষণে আপনার প্রার্থীতব্য কি আছে, প্রকাশ করুন।” দালভ্য বলিলেন— “হে জগদগুরো, এই চন্দ্রসেন— পত্নী-গর্ভস্থ বালিকাটিই আমার প্রার্থনীয়।" ভার্গব (অগ্ৰেই বরদানে স্বীকৃত ছিলেন, কাজেই) বললেন “আমি ক্ষত্রিয়হন্তা, এই বালকের জন্যই এস্থানে আসিয়াছি, আপনে ইহাকেই প্রার্থনা করিলেন!! আপনার প্রার্থনা পূর্ণ করিতেই হইল, কিন্তু এই বালক যেন ক্ষত্রিয় শব্দে সংজ্ঞিত না হয়। (ব্ৰহ্ম-কায়া সমুদ্ভূত) ক্ষত্রিয় এই বালকের ভবিষ্যতে কায়স্থ নাম হইবে। কিন্তু জন্মগ্রহণ করিয়া বালক যদি ক্ষত্ৰধৰ্ম্মী হয়, তবে তাহাকে বারণ করিবেন।” এইরূপ বলিয়া দলভ্যাশ্রম ত্যাগ করতঃ কল্পান্তাগ্নিসমপ্রভ ভার্গব ক্ষত্রিয় বিনাশ করিতে অন্যত্র ধাবিত হইলেন। এইরূপে ক্ষত্রিয় তনয়ের কায়স্থ নাম প্রাপ্তি ঘটিল এবং এই হইতেই তাহারা ক্ষত্ৰধৰ্ম্ম বৰ্জ্জিত হইলেন।১১ এইরূপে ক্ষত্ৰধৰ্ম্ম বৰ্জ্জিত ও কায়স্থ নামে খ্যাতি হইয়া তাহারা চিত্রগুপ্তের অবলম্বন লেখ্যবৃত্তি গ্রহণ করেন।১২ কায়স্থের পদ্ধতি আদিশূরের আনীত পঞ্চব্রাহ্মণের সহিত ঘোষ, বসু, গুহ, মিত্র ও দত্ত বংশীয় পাঁচ জন কায়স্থ বঙ্গদেশে আগমন করেন। বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজে ইহারাই কুলীন কায়স্থ। উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়, বরেন্দ্র ও বঙ্গ এই স্থান চতুষ্টয়ে বাসভেদে ইহাদের মধ্যে শ্রেণীভেদ হইয়াছে। ধ্রুবানন্দের কারিকা হইতে বঙ্গীয় কায়স্থগণের কুল পরিচয় নিম্নে লিখিত হইলঃ– (১) গুহ, ঘোষ, বসু, মিত্র। এই চারি ঘর দক্ষিণ রাঢ়ীয় আদি কুলীন । (২) ঘোষ], দশ, সিংহ। এই তিন ঘর উত্তর রাঢ়ীয়। (৩) চাকি, নন্দী, নাগ। এই ঘর বারেন্দ্র। (৪) ওমৃ দত্ত, দাস, পাল, পালিত, সিংহ] সেন । সাতঘরে ইহারা মৌলিক । (৫) অঙ্কুর, আঢ্য, কর, কুণ্ড, ধর, নন্দন, বৰ্দ্ধন, বিষ্ণু, ভঙ্গ, লাহা, ওম, ঘোষ, চন্দ, দত্ত দাস, নন্দী, পালিত, সিংহ, সেন।] এই উনবিংশতি জন "বঙ্গজের মহাপাত্র হন।" (৬) অর্ণব, আইচ, আদিত্য, আস, ইন্দ্র, উপমান, এন্দ, কীৰ্ত্তি, ক্ষাম, ক্ষেম, ক্ষোম, খিল, গণ, গণ্ডা, গুই, গুটা, গুণ, গুপ্ত, ঘর, চন্দ্ৰ, তেজঃ, দাম, দাহা, দানা, দেত্য, দেব, ধনু, ধরণী, নাথা, পিল, ভঞ্জ, ভুই, ভূত, মান, যশ, রক্ষিত, রঙ্গ, রাজা, রাণা, রাহা, রাউৎ, রুদ্র, লোধ, সোর্মা, হড়, হুই, হেম, হেস, [অঙ্কুর, কুণ্ড, ধর, নন্দী, নাগ, পাল বৰ্দ্ধন, বিষ্ণু, ভদ্ৰ ] এই ৭২ ঘর সাধ্য মৌলিক ॥১৩ শ্রীহট্টে (এবং ত্রিপুরা, ময়মনসিংহেও) বঙ্গের অন্যান্য স্থানের ন্যায় এই ঘোষ, বসু প্রমুখ কৌলিন্য নাই। পূৰ্ব্বেই বলা গিয়াছে, আদিশূর আনীত পঞ্চব্রাহ্মণের সহিত বঙ্গে পঞ্চকায়স্থাগমন ঘটে। শ্রীহট্টাদি অঞ্চলে তাহাদের প্রভাব ও বংশবিস্তৃতি ঘটে নাই। এ স্থলে তাহদের আখ্যা ইত্যাদি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য এই যে, পূৰ্ব্বোক্ত খ্যাতি সম্পন্ন বহুতর কায়স্থ পরবর্তীকালে রাঢ় প্রভৃতি স্থান হইতে এদেশে আগমন করেন; খ্যাতি দৃষ্টে তৎপরিচয় পাওয়া যাইবে। ১১. “কায়স্থ এষ উৎপন্নো ক্ষত্রিণ্যাং ক্ষত্রিয়াৎ ততঃ। রামাজ্ঞয়া সদালভ্যেন ক্ষত্রধৰ্ম্মদ্বহিস্কৃত৷”— স্কন্ধপুরাণ ৪৭ অধ্যায় ৪৪ শ্লোক । ১২. পুরাণান্তরে অন্যরূপ আখ্যান ও লিখিত আছে । ১৩. এই শ্রেণী বিভাগে বহুমতাস্তব লক্ষিত হয়, বিভিন্নমতে মৌলিকাদি শ্রেণীতে ভিন্ন ভিন্ন ঘর গণিত হইযা থাকে । শ্রীহট্টাদি অঞ্চলে ইহার অনেকটিই লক্ষিত হয় না ।