পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড ভাবে আসিতেছিলেন। রতিরামের জনৈক নূতন কৰ্ম্মচারী তাহাকে নিষেধ করিলে তিনি গৌরববশতঃ তাহা অগ্রাহ্য করিয়া অগ্রসর হন; ইহাতে বিবাদ উপস্থিত হয় এবং জনৈক আক্রমণকারীর আঘাতে দৈবতঃ দোলারোহী প্রাণত্যাগ করেন। মৃতদেহ রতিরামের বাড়ীতে নীত হইলে হতব্যক্তি তাহারই জামাতা বলিয়া পরিচয় পাওয়া যায়। রতিরামের তনয়া তখন পিতৃগৃহে ছিলেন, এই ঘটনায় তিনি শোকে ম্রিয়মান হইয়া অচিরেই স্বামীর শবদেহ বক্ষে করতঃ চিতায় প্রবেশপূৰ্ব্বক অনন্তপথের পথিক হন। এই হৃদয় বিদারক ঘটনায় রতিরাম শোকাকুল হইয়া জনসঙ্গ ত্যাগ করিলেন এবং দীঘীর মধ্যস্থলে এক "জলটঙ্গী" (গৃহ) প্রস্তুত ক্রমে তথায় অবস্থানপূৰ্ব্বক অচিরেই প্রাণ পরিত্যাগ করিলেন। রতিরামের শুভারাম ও নন্দরাম নামে দুই পুত্র পিতার মৃত্যুর পর এ দুর্ঘটনার স্থান পরিত্যাগপূৰ্ব্বক পং বেজোড়ার বরগ গ্রামে বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়া বাস করেন। শুভারামের রাধারাম ও কালারাম নামে দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজচন্দ্র রায় ব্রহ্মদেশে একটি কৰ্ম্মোপলক্ষে গমনকালে সমুদ্রে জাহাজ ডুবিয়া মারা যান। রাধারাম জ্যোতিষ সাহায্যে একথা বাড়ীতে থাকিয়াই অবগত হইয়াছিলেন। তাহার মধ্যম পুত্র জয়চন্দ্রও ব্রহ্মদেশে খাজাঞ্চির কৰ্ম্ম করিতেন । তিনি অতি অতিথি-সেবাপরায়ণ ছিলেন। বাড়ীতে একটা ঘণ্টা বাজিতে এবং নিরূপিত সময়ে যে আসিত, উদর পুরিয়া খাইত। গণনাদ্বারা রাধারাম বলিয়াছিলেন যে তাহার কনিষ্ঠ পুত্র ব্রজমোহনের স্ত্রী গর্ভবতী হইলেই পতিহীনা হইবেন; ফলে তাহাই ঘটিয়াছিল। তাহার ঐ পুত্রবধুও পূণ্যবতী রমণী ছিলেন; নিজ মৃত্যুর কথা তিনি পূৰ্ব্বেই অবগত হন ও সকলের কাছে প্রকাশপূৰ্ব্বক "বৈতরণী" করিয়া, রামনাম উচ্চারণ করিতে করিতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। মৃত্যুর কিছু পূৰ্ব্বে তিনি বাড়ীতে বিলম্ববৃক্ষমূলে কিছু স্থান পরিষ্কার করিয়া তদুত্তরে একটি তুলসী বৃক্ষ রোপণ করিয়া রাখেন। তাহার মৃত্যুর পর এই স্থানেই শব নীত হইয়াছিল। ইহার পুত্র শ্রীযুক্ত মথুরানাথ রায় এ বিবরণ প্রেরণ করিয়াছেন। পরগণা-বাণিয়াচঙ্গ৯ সোম ও দত্ত বংশ কথা বাণিয়াচঙ্গ পরগণার সাঙ্গর গ্রাম নিতান্ত অপ্রসিদ্ধ নহে, ইহা নিজ বাণিয়াচঙ্গ হইতে প্রায় দশ মাইল দক্ষিণে; এই স্থানে বহুতর দীর্ঘ দৃষ্ট হয়। কথিত আছে, রাঢ়দেশ হইতে সোমবংশীয় একব্যক্তি এই স্থানে আসিয়া বাটিকা নিৰ্ম্মাণ করেন, তিনি “বুড়া অধিকারী” নামে খ্যাত ছিলেন। এ সমস্ত দীঘী তাহার কৃত বলিয়া কথিত আছে; এই সকল দীঘীর মধ্যে "মালের দীবী" বৃহত্তর; ইহার দক্ষিণ তীরে দুইটি শিলা লক্ষিত হয়। সোমবংশীয় জনৈক মাল (বলশালী ব্যক্তি) উক্ত শিলাদ্বারা কন্দুক ক্রীড়া করিতেন বলিয়া প্রবাদ। যাহা হউক, বুড়া অধিকারী নিজ বাটিকা গড়বেষ্টিত করিয়াছিলেন; উহা সোমদের গড় এই শব্দদ্বয়ের যোগে সোমগড়=সাঙ্গর গ্রামের নামোৎপত্তি। কিন্তু বৰ্ত্তমানে এই স্থানে সোমবংশীয় কেহ নাই; কর, ধর, ও সেন প্রভৃতি কয়েক বংশীয়ের বাস আছে। কিন্তু সোমদের ন্যায় ইহাদেরও কোন বৃত্তান্ত জ্ঞাত হওয়া যায় নাই। বিবরণী প্রদাতা শ্রীযুক্ত দ্বারকা নাথ দত্ত মহাশয় লিখিয়াছেন, দত্ত বংশে ইদানীং শিব প্রসাদ দত্ত ও তদীয় ভ্রাতা স্বয়মুখিত ব্যক্তি ছিলেন। শিব প্রসাদ ও তদীয় ভ্রাতৃত্ৰয়ের মধ্যে তিনিই জ্যেষ্ঠ এবং জানকী নাথ কনিষ্ঠ ছিলেন । শিব প্রসাদ পদব্রজে কলিকাতায় গমন করিয়া বড়বাজারে এক ৯. বাণিয়াচঙ্গ নগরে নাগ-নন্দী-দত্ত-সেন এই মৌলিক বংশ এবং অভ্যাগত সেন দত্ত-মজুমদার বংশ কায়স্থ-বৈদ্য মধ্যে প্রধান স্থানীয় । মৌলিক বংশ চতুষ্টয়ের নামে পল্লীর নাম আছে; যথা নাগ-জাতৃকর্ণ পাড়া, সেন পাড়া ইত্যাদি। দুঃখের বিষয় যে, ইহাদের বংশবিবরণ আমরা পাইলাম না।