পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-পঞ্চম খণ্ড করিতেন। তাহার অনুগ্রহে মনোহর রায় লাউড়, বেতাল সুখাইড় ও আটগাও পরগণার কানুনগো পদে নিযুক্ত হইয়া “পুরকায়স্থ" পদবি প্রাপ্ত হন। তিনি সম্পত্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন বলিয়া অপরাপর কানুনগো হইতে অনেকাংশে তাহার ক্ষমতা অধিক ছিল। বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ান একদা বেহেলিতে আগমন করিয়াছিলেন। কার্য্যবশতঃ তখন মনোহর নিকটবৰ্ত্তী জয়শ্রী গ্রামে গমন করিয়াছিলেন। মনোহর তত্ৰত্য জমিদার দুর্গাপ্রসাদ চৌধুরীর শালিকা-পতি ছিলেন; দুর্গাপ্রসাদ মনোহরকে দেখিতে পাইয়া শ্লেষব্যঞ্জস্বরে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন-“পুরকায়েত মহাশয় । তোমার দেওয়ান সাহেব কবে আসিবেন?” উত্তরে মনোহর এইমাত্র বলিলেন—“দেওয়ান কি শুধু আমার, আপনার নহেন কি?” মনোহর আপনাকে অপমানিত জ্ঞান করিয়া দেওয়ানের কাছে গেলেন ও ইহা বলিলেন। দেওয়ানের নৌকা-বহর তখন জয়শ্রীমুখে ফিরিল। দেওয়ান যথাকালে জয়শ্রী পৌঁছিয়া করাতদ্বারা, দুর্গাপ্রসাদকে দ্বিখণ্ডিত করিতে আদেশ দিলেন । দুর্গাপ্রসাদের গৃহে হাহাকার ধ্বনি উত্থিত হইল, তাহার স্ত্রী মনোহরকে অন্দরে লইয়া গিয়া ক্ৰন্দন করিতে করিতে স্বামীর প্রাণ-ভিক্ষা চাহিলেন। তাহার কাকুতি মিনতি ও অনুরোধে মনোহরের চিত্ত দ্রব হইল, তিনি তৎপ্রদত্ত একথালা স্বর্ণমুদ্রা লইয়া দেওয়ানের কাছে গেলেন ও দুর্গাপ্রসাদের অপরাধানুরূপ বহু লাঞ্চনা ভোগ হইয়াছে, এক্ষণে দেওয়ান বাহাদুর দয়া করিয়া ক্ষমা করিতে পারেন, মনোহরের এই অভিপ্রায় অবগত হইয়া দেওয়ান নজর গ্রহণ করিলেন। দুর্গাপ্রসাদ প্রাণ পাইলেন, কিন্তু মনোহরের সহিত তাহার আর সৌহৃদ্য স্থাপিত হয় নাই। মনোহর সুখাইড়ের চৌধুরী বংশে যে বিবাহ করেন, সেই স্ত্রীর গর্ভে সোণারাম, ধনরাম ও স্বরূপরামের উদ্ভব; দাহার অপর পুত্রদ্বয় দ্বিতীয়া স্ত্রীর গর্ভসস্তুত। সোণারাম পিতার ন্যায় বুদ্ধিমান ছিলেন, তিনি পূৰ্ব্বোক্ত সনন্দের ভূমি ব্যতীত আরও অনেক ভূমি বন্দোবস্ত করেন, তন্মধ্যে; কতক ভূমি (১৭নং তাং) তাহার নাম ঘোষণা করিতেছে। তাহার ও অনন্তরামের যুক্ত নামে অপর একটা তালুক (১১২নং সোণা-অনন্ত) সংজ্ঞিত হইয়াছে। তাহার অনুজ ধনরামের নামেও একটি তালুকের নাম হইয়াছে (১১৩নং তাং)। তাহার ভ্রাতা স্বরূপরাম বেহেলির রাধামাধব বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করিয়া স্বগীয় হইয়াছেন। দশসনা বন্দোবস্তের পর হইতে মনোহর রায়ের পরবত্তী বংশধরগণ তালুকদার বলিয়া খ্যাতিলাভ করেন, চন্দ্রনারায়ণের বংশীয়গণ পূৰ্ব্বের পুরকায়স্থ পদবিতেই পরিচিত আছেন। তাহারা সনন্দোল্লেখিত ভূমি প্রাপ্ত হন নাই, মনোহর প্রদত্ত কিছুটা জমি পাইয়াই তুষ্ট আছেন। বেহেলির গোস্বামী এবং ব্রাহ্মণগণ মনোহর প্রদত্ত দেবত্র এযাবৎ ভোগ করিতেছেন। এই বংশের উপযুক্ত সন্তান শ্রীযুক্ত কৈলাসচন্দ্র দাস মহাশয় স্বীয় বংশ বিবরণ, পূৰ্ব্ব পুরুষ প্রাপ্ত সনন্দের চিত্রাদি ও দাস বংশীয় অন্য ২/১ টি বিবরণ প্রদানপূৰ্ব্বক আমাদিগকে বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন। গৌরারঙ্গের দাস-চৌধুরী বংশ এই বংশের আদি পুরুষের নাম নিধিরাম । ইনি বঙ্গদেশীয় জনৈক কায়স্থ সন্তান। বালে। একটি মোহরের কাৰ্য্যে নিযুক্ত হইয়া পদোন্নতি সহকালে শ্রীহট্টে প্রেরিত হন। এখানে আসিয়া দাস জাতীয় কোন ভূম্যধিকারীর এক সুলক্ষণা কন্যাকে বিবাহ করিয়া এদেশবাসী হন। সুরমা নদীর পশ্চিম ভাগে একটি উচ্চ জঙ্গল ভূমি, তিনি জনৈক রাজপুরুষের অনুগ্রহে প্রাপ্ত হইয়া তাহাতে বসতবাটী নিৰ্ম্মাণ করেন। তাহার বাটী যে শ্ৰীসম্পন্ন স্থানে বিনিৰ্ম্মিত হয়, সে স্থানটী