পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[আটত্রিশ] দেশে বাস করিতে আদেশ করিলেন ।” এই প্রবাদ কতদূর সত্যমূলক বলা যায় না। কিন্তু দাস জাতির দৈহিক বল, শ্রমসহিষ্ণুতা ও সাহসাদি তাহাদিগকে এক বীরজাতির বংশধর বলিয়াই প্রতিপন্ন করে। শ্রীহট্টে দাস জাতির মধ্য পদস্থ ও ধনবান অনেক আছেন। নবশায়ক জাতি অতঃপর শূদ্র বা চতুর্থ বর্ণ মধ্যে নবশায়ক জাতির বিবরণ এস্থলে প্রদেয়; ইহাদের সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা না করিয়া ২/৪টি কথা মাত্র বলা যাইতেছে। নবশায়ক কাহারা?— “গোপস্তিলীচ মালীচ তন্ত্রীমোদক বারুজী । কুলালঃ কৰ্ম্ম-কারশ নাপিতো নবশায়কাঃ।” ইহারও আবার মতান্তর আছে। সে সম্বন্ধে এ স্থলে কোনরূপ বিচার না করিয়া ইহাদেরই কথা বলিতেছি । কামার-বঙ্গে ইহাদের মধ্যে তিন সমাজ দৃষ্ট হয়। এদেশে ইহারা দত্ত, দেব, দাস প্রভৃতি উপাধি ধারণ করিতে দেখা যায়। কুমার— ইহাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে এক উপন্যাস শুনিতে পাওয়া যায়। দেবাদিদেব মহাদেবের বিবাহ কালে, প্রথানুসারে ঘট স্থাপন করা হইলে, তদুপরি শিবের দৃষ্টিপাত হওয়ায়, তৎক্ষণাৎ তাহা হইতে এক পুরুষের উদ্ভব হয়; রুদ্র অংশে অদ্ভুত হওয়ায় সেই পুরুষ “ঘটরন্দ্র” নামে খ্যাত হন। কুম্ভকারগণ ইহারই বংশসস্তুত বলিয়া প্রকাশ। প্রাচীন গ্রন্থাদিতে "ঘটখপর” বলিয়া ইহাদের উল্লেখ দেখা যায়, এবং ব্যবহারেও কুমারগণ আপনাদিগকে এদেশে “রুদ্রপাল" বলিয়া লিখাইবার প্রমাণ পাওয়া যায় । গোয়ালা— শ্রীহট্টে অতিশয় অল্প সংখ্যক আছে। ইহাদের ব্যবসায় দধি, দুগ্ধ বিক্রয়। কৃষি ব্যবসায়ও তাহাদের মধ্যে আছে। পশ্চিম বঙ্গে কৃষি ব্যবসায়ীরা পল্লবগোপ ও দুগ্ধাদি বিক্রেতাগণ আহিরীগোপ নামে খ্যাত। পূৰ্ব্বাঞ্চলে রাজশাহীতে কতক আহিরীর বাস আছে। ব্রজের গোপরাজ নন্দ এবং এই বংশীয় ছিলেন। তাতি— তাতিদের মধ্যে বঙ্গের বসাকগণ প্রসিদ্ধ। ইহারা দে, দত্ত, দাস, শীল, গুই ইত্যাদি উপাধিধারী। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, শান্তিপুর প্রভৃতি স্থানের তাতিগণ বস্ত্রবয়নে বঙ্গের গৌরবের সামগ্রী । শ্রীহট্টে ইহাদের সংখ্যা যৎসামান্য । তেলী— ইহাদের উৎপত্তির উপাখ্যানটির বড়ই সুন্দর। কথিত আছে, একদা দেবাদিদেব মহাদেবের সুমধুর সঙ্গীত শ্রবণে ভগবান বিষ্ণু ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়া উঠিলে, সেই স্বেদবারি হইতে গঙ্গার উদ্ভব হইল, প্রজাপতি গঙ্গাদেবীকে স্বীয় কমন্ডলু মধ্যে ধারণ করিয়া, বিষ্ণুদেহ মাৰ্জ্জন করিলে, নারায়ণ-দেহ হইতে একটি তিল বহির্গত হয়। ব্ৰহ্মা মনোহর পাল নামক মুনিকে সেই তিল রক্ষার ভার দেন; তজ্জন্য তিনি তিলী বা তেলী নামে খ্যাত হন। কথিত আছে যে, তৈলিকগণ সেই পাল-ঋষি বংশীয় বলিয়া পাল নামে খ্যাত। বঙ্গে ইহাদের মধ্যে চারিশ্ৰেণী আছে, তন্মধ্যে অনেক বড় বড় জমিদার ও প্রতিপত্তিশালী লোক বিদ্যমান। শ্রীহট্টেও ইহাদের মধ্যে সম্পন্নব্যক্তির অভাব নাই। নাপিত— কথিত আছে, সৃষ্টির আদিতে ভগবতীর ইচ্ছা ক্রমে হাড়োদাস ও ব্রহ্মদাস নামে দুইজন দৈবপুরুষের উদ্ভব হয়, এই দৈবপুরুষদ্বয়ের সন্তানই নরসুন্দর বা নাপিত নামে খ্যাত। বঙ্গে