পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৩ বঞ্চিত সাধন প্রভাবে অব্যাহত গতি লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া লিখিত আছে, বৃন্দাবনে তিনি সামান্য কয়েকদিন মাত্র ছিলেন, তাহার পরেই নিজগৃহে উপনীত হন। তিনি দেশে আসিলে তাহার মাতা বিবাহের উদ্যোগ করিলেন, পঞ্চেশ্বরের বিশ্বাস বংশে একটি সুপাত্র তিনি পূৰ্ব্বেই স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন, ইহাকেই বধূ করিতে ইচ্ছা করিলেন; বঞ্চিত আর অস্বীকৃত হইলেন না, মাতৃ আজ্ঞাপালনে গৃহী হইলেন। দেশে সংকীৰ্ত্তন বিবাহের পর বঞ্চিতের ভাবের কিছুমাত্র ব্যত্যয় ঘটিল না, বরং সংকীর্ণ তরঙ্গ আরও বদ্ধিত হইল, “বাণী চরিত্র” পাঠে জানা যায় যে, এই সময় ঠাকুর বাণী, পাগল শঙ্কর এবং বৈষ্ণব রায় তাহার সহিত কীৰ্ত্তনে কখন কখন যোগ দিতেন। কথিত আছে এতদঞ্চলে চৌতালা কীৰ্ত্তনের তিনিই প্ৰবৰ্ত্তন করেন। তাহার কীৰ্ত্তন কেবল স্বগ্রামেই নিবন্ধ রহিল না, তিনি ভক্তবর্গ সহ কীৰ্ত্তন লইয়া স্থানে স্থানে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। যে গ্রামে তিনি যাইতেন তাহার মহিমায় লোক আকৃষ্ট হইয়া যাইত ও হরিনাম গ্রহণে পবিত্র যে যে স্থানে তাহার কীৰ্ত্তন বিশেষ ফলপ্রদ হইয়াছিল; তন্মধ্যে ভানুগাছ, বালি শিরা, সাতগাঁও আতুয়াজান, শ্রীহট্ট শহর, লক্ষ্মীপুর, ইন্দেশ্বর, লংলা প্রভৃতি প্রধান। তিনি সাতগাও অবস্থিতি কালে ঠাকুরবাণীর শেষ মহোৎসবের নিমন্ত্রণ পত্র প্রাপ্তে দিনারপুর গমন করেন ও তথায় ঠাকুরবাণীর সহিত মিলিত হন। এই উৎসবের শেষ দিনেই ঠাকুরবাণী আত্মীয় বর্গ হইতে বিদায় লইয়া লোকলোচনের অন্তরালে চলিয়া যান ॥৩৭ বঞ্চিত পরিভ্রমণ কালে, যাহাকে সম্মুখে পাইতেন, তাহাকেই আগ্রহ সহকারে বলিতেন— “হরি হরি একবার মুখে বল ভাই। আমরা কলির জীবের অন্য গতি নাই॥ কীৰ্ত্তনে প্রায়শঃ তিনি স্বরচিত একটি গীত ব্যবহার করিতেন, তাহা এইঃ– “একান্ত ভজ গৌরাঙ্গ চরণ। এমন সম্পদ আর নাহিক ভুবন৷ নিরবধি ভববিধি যাহা না পাইলা । অবতরি গোরাচাদ তাহা বিলাইলা॥ হরিনাম সংকীৰ্ত্তন নাচিয়া গাইয়া। আপন মাধুর্য্য ভাব দিলা জানাইয়া॥ যশোদানন্দন পহু মাধুর্য্য সাধিয়া । , নবদ্বীপ হাটে আনি দিলা চালাইয়া॥ মোসম অধম লাগি কৃষ্ণের অবতার। বঞ্চিত কহরে জাণ গৌরাঙ্গ আমার॥" ঘোষ ঠাকুর বালিশিরার জনৈক মোসলমানকে বৈষ্ণব ধৰ্ম্মাশ্রিত করেন। ভানুগাছে অবস্থিত কালে তারণ রামধর নামক এক ব্যক্তির বাড়ীতেই তাহার কীৰ্ত্তন স্থান নিণীত হইয়াছিল। আতুয়াজানে বহুতর ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি তাহার নিকটে সমুপস্থিত হইয়াছিলও কেহবা তাহার হস্তম্পর্শে, কেহবা সংকীৰ্ত্তনের ধ্বনি তরঙ্গিত বায়ুস্পর্শে ব্যাধিমুক্ত হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। প্রাণ শঙ্কর চৌধুরী নামে তথাকার এক ব্যক্তি বিশেষ যত্ন সহকারে তাহার সেবা করেন। তিনি ইন্দেশ্বর পৌছিলে অত্রত্য খলগ্রাম বাসী জনৈক চৌধুরী তাহার অভ্যর্থনা করেন। লংলাতে ৩৭, ঠাকুর বাণীর বৃত্তান্ত এসব কথা বিস্তারিত কথিত হইবে।