পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ জগন্মোহনের বাল্য চরিত্র অতি সুন্দর। কিন্তু জগন্মোহন ভাগবত কার অনেক স্থলেই শ্রীচৈতন্য লীলার ছাচে ফেলিয়া উহা লিখিতে গিয়া পাঠককে সংশয়ান্বিত করিয়াছেন ॥৫৩ জগন্মোহন শিশুকাল হইতেই কৃষ্ণভক্ত। জগন্মোহনের পিতা বিষ্ণুভক্ত হইলেও পুত্রের এই ভক্তিভাব একবারেই ভালবাসিতেন না; কিন্তু মাতা পুত্রেরই পক্ষপাতিনী ছিলেন। শেষটা এইরূপ দাড়াইল যে, পিতা তাহাকে সংকীৰ্ত্তনে যাইতে একেবারে নিষেধ করিয়া দিলেন এবং পুত্র যাহাতে সংসারাসক্ত হয়, তজ্জন্য এক সুন্দরী বালিকার সহিত পুত্রের বিবাহ দিলেন (৫৪ বিবাহের কিছুকাল পরে ঘটনাক্রমে তাহার গৃহে গোপীনাথ নামক জনৈক বৈষ্ণবের আগমন ঘটে, পিতা তখন বাড়ীতে ছিলেন না। এই বৈষ্ণবের সঙ্গ প্রভাবে জগন্মোহনের অনুরাগ আরও বিবৰ্দ্ধিত হইয়া উঠে। পরে পিতা ইহা জানিতে পারিয়া পুত্রের প্রতি আরও ক্রুদ্ধ হন এবং ৫৩. জগন্মোহনের জন্মের পর শ্রীহট্টের চিরাচরিত আচার মতে ৬ষ্ঠ দিনে— জাত কৰ্ম্ম অন্তে নাম করণাদি ক্রিয়া যত । ষষ্ঠি আদি ক্রিয়া কৈল বেদ বিধিমতে॥ সম্পন্ন হইয়াছিল। শ্রীচৈতন্যের জন্ম হইলে যেমন নারিগণ দর্শনে আসিয়াছিল, শ্রীচৈতন্য ক্ৰন্দন করিবার কালে হরি বলিলেই যেমন থামিয়া যাইতেন । ইহার সম্বন্ধে তদ্রুপ লিখিত হইয়াছে, যথা রমণিগণ— “রাম নারায়ণ বলি হাতে তালি দিল । নাম ধ্বনি শুনি শিশু হাসিতে লাগিল । শ্রীচৈতন্য যখন শিশু, তখন একদা একটি সাপ আসিয়া শয্যায় উপস্থিত হইয়া শচীর ত্রাস উপস্থিত করিয়াছিল, ইহর সম্বন্ধেও অদ্রুপ কথা আছে, এক ব্যক্তি জগন্মোহন জননীকে সংবাদ দেয় যথা— “এক সাপ বেড়িয়াছে কুমার তোমায়। নিদ্রা যায় মোহন চেতনা নাহি তার।" শ্রীচৈতন্যকে একদা মাটি খাইতে দেখিয়া শচী ভৎসনা করিয়াছিলেন, জগন্মোহন ভাগবতকার এ কথাও ভুলেন নাই, লিখিয়াছেনঃ– “কতক্ষণে সুধাবতী আসিয়া দেখেন। মাটি কেন খাও বাচা, তৰ্জ্জিয়া বলিল॥ শিশু বলে ও গোম মাও বৃথা দেও গালি, মাটিতে উদ্ভব দেখি হইয়াছে সকলি॥—ঐ । উত্তরে মা বলিলেন—“মাটি খাইলে রোগ হয়, কান্তি হয় ক্ষয়" তাহা শুনিয়া পুত্র বলিলেন—“তবে আগো ইহা মাগো কেনে না বলিলে।” ইত্যাদি ইত্যাদি মাঘ, সংখ্যা নব্য ভারতের লেখক জগন্মোহনের জন্মস্থান সম্বন্ধে কোন “উচ্চ বাচ্য" না করিলেও এ সব বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন। প্রথমেই তিনি বলিয়াছেন যে ১৪৫০ শকে শ্রীচৈতন্য এবং “নিত্যানন্দ প্ৰভু সশরীরে বিদ্যমান। তদবস্থায় তাহার দ্বিতীয় অবতার কিরূপে সম্ভব হয়?” “শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দের অবতার সহ জগন্মোহনকে জোড়া দেওয়ার জন্য যে চেষ্টা করা হইয়াছে, সব চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে।” আমরা বলি—এ জোড়া উদ্দেশ্যে চন্দ্রদ্বীপ ও পুরন্দর প্রভৃতি নাম এবং পূৰ্ব্ব বর্ণিত লীনা-কথার বর্ণনাও ব্যর্থ ও ভিত্তি বিহীন । উদাহরণ স্থলে মাত্র কয়েকটি কথা এ স্থলে প্রদর্শন করিলাম। ৫৪. জনশ্রুতি মতে এই কন্যার নাম গঙ্গা, জগন্মোহন ভাগবতকার লিখিয়াছেন— যজ্ঞেশ্বর রায়-কন্যা মায়াবতী ৷ অপূৰ্ব্ব লক্ষণা কন্যা যে ভগবতী।” ভাগবতকার বলেন যে বিবাহের ঘটকের নাম গঙ্গাদাস ছিল । তাহা হইতেও পারে এবং মায়াবতীর নামান্তরও গঙ্গা হইতে পারে। ঐ গ্রন্থ মতে চন্দ্রদ্বীপের তখন যিনি রাজা ছিলেন, তিনি ইহার মাসীকে বিবাহ করেন। বৈদ্য কায়স্থের এই বিবাহের প্রসঙ্গে নব্য ভারত বলিয়াছেন—“চন্দ্রদ্বীপে বৈদ্যরাজা ছিলেন কি না জানা যায় না। বোধ হয় পূৰ্ব্বে চন্দ্রদ্বীপেও কায়স্থগণ বৈদ্যের কন্যা বিবাহ করিতেন। সে প্রথার অবশেষ মৈননসিংহ শ্রীহট্টাদি দেশে এখন বিরাজমান।" লেখক এই চন্দ্রদ্বীপের প্রকৃত পরিচয় না পাওয়াতেই এতটা কল্পনা করিয়া বৈদ্য কায়স্থ বিবাহের অর্থ করিয়াছেন । এই চন্দ্রদ্বীপ যে শ্রীহট্টেরই ঢন্দ্রপুর বা চান্দপুর (বাঘাসুরা), তাহা জানা থাকিলে এই বৈদ্য কাযস্থ বিবাহ প্রসঙ্গের সঙ্গত কারণ পাইতেন। কল্পনার আশ্রয় লইতে হইত না । বলা বাহুল্য যে শ্রীহট্টেই বৈদ্য ও কায়স্থ মধ্যে বিবাহাদি প্রচলিত আছে।