পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত 實 চতুর্থ ভাগ সপ্তদশ বৎসর বয়ক্রম পর্য্যন্ত নিত্যানন্দ- লেখাপড়ার চেষ্টা করেন নাই। গ্রাম্য বালকদল সহ কেবল খেলিয়া বেড়াইতেন । পিতা মাতা ও প্রতিবেশী বর্গের তিরস্কারে অতঃপর নিকটবৰ্ত্তী একটি টােলে প্রবিষ্ট হন, তখন দেখা গেল যে ইহার স্মৃতিশক্তি অতি প্রখর, একবার পুথি দেখিলেই অভ্যাস হইয়া যায়। বুদ্ধিও চমৎকার, পাঠের সদর্থ আপনিই করিয়া লইতে সমর্থ। পুত্রের এই প্রশংসাবাদ শুনিয়া পিতামাতা অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন ও পুত্রকে এক বার বাড়ী আসিতে সংবাদ দিলেন, কিন্তু নিত্যানন্দ কিন্তু নিত্যানন্দ না গিয়া লিখিলেন; পাঠ সমাধা করিয়া একসঙ্গেই আসিবেন। অন্যে একমাসে যে বিদ্যা আয়ত্ত করিতে অসমর্থ। নিত্যানন্দ একদিনেই অক্লেশে তাহা শিখিয়া ফেলেন; কাজেই বৎসরেক মাত্র সময় মধ্যে তাহার পাঠ একরূপ সমাধা হইল; তিনি গুরু গৃহ হইতে স্বগৃহে আগমন করিলেন। সমগ্র গীতা ও শ্ৰীমদ্ভাগবতের দশম গুন্ধ তাহার কণ্ঠস্থ ছিল। বাড়ীতে আসিয়া তিনি এক টোল স্থাপন করেন, অনেকেই সেই টোলে শিক্ষার্থ হইয়া আসিয়াছিল, সেই ছাত্রদের মধ্যে দুই এক জন খ্যাতিনামা পণ্ডিত এখনও আছেন। জ্যোতিৰ্ব্বিদ্যা ও অঙ্কশাস্ত্রে তাহার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল, ফলিত জ্যেতিষ আলোচনা দ্বারা তিনি প্রশ্ন গণনায় ভবিষ্যৎ ফলাফল বলিয়া দিতে পারিতেন। এক বৎসর পৌষ মাস হইতে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত কিছুমাত্র বারিপাত না হওয়াতে দেশের কৃষককুল বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠে। ইটার মনসুর নগরের জমিদার দেওয়ান গাফুর মিয়া, প্রশ্ন গণনায় নিত্যানন্দের সুখ্যাতি শ্রবণে, তাহাকে আহবান করতঃ বৃষ্টি ফলাফল গণনা করিতে বলেন। গণনা করিয়া তিনি স্বয়ংই সন্দিহান হইয়া নিরুত্তর রহিলেন, পরে দেওয়ানের পুনঃ পুনঃ প্রশ্নে উত্তর করিলেন—“দেওয়ান সাহেব! গণনায় অসম্ভব বিষয় দেখিতে পাইতেছি, বলিতে সঙ্কোচ হইতেছে। কথা শুনিয়া দেওয়ানের কৌতুহল হইল এবং অসঙ্কোচে গণনার ফল প্রকাশ করিতে বলিলেন। নিত্যানন্দ বলিলেন—গণনায় আজই বিষম বৃষ্টি হইবে, প্রবল বেগে ঝড় উঠবে, বলিতে সঙ্কোচ হইতেছে। দেখিতেছি সাহেবের গৃহের পর্যন্ত অনিষ্ট হইতে পারে। বারবার গণনাতেও একই ফল বাহির হইল।” দেওয়ান হাসিয়া উঠিলেন; পণ্ডিতের উভয় কথাই সম্ভাবনার অতীত। কারণ তখন আকাশে মেঘের চিহ্ন মাত্রও ছিল না। নিত্যানন্দ একরূপ অপ্রস্তুত ভাবেই নিজ গৃহে ফিরিয়া আসিলেন কিন্তু সেই রাত্রেই আশাতীত বৃষ্টি হইল, প্রবল ঝড় বহিল এবং তাহাতে বাস্তবিকই দেওয়ানের বাড়ীর একটি গৃহের চালা উড়াইয়া লইয়া পার্শ্ববর্তী পুষ্কণীর জলে ফেলিয়া দিল। দেওয়ান সাহেব এবং যাহারা ঐ গণনার সংবাদ রাখিতেন, তাহার নিত্যানন্দ ঘোষের গণনার সাফল্য দর্শনে তৎপ্রতি শ্রদ্ধাবান হইলেন। দেওয়ান পরদিন পুনঃ লোক পাঠাইয়া তাহাকে নেওয়াইলেন এবং একখানা শালবস্ত্র ও একটি স্বর্ণমুদ্রা পারিতোষিক স্বরূপ প্রদান করিলেন। কেবল তাহাই নহে, তাহাকে স্বীয় “দ্বারপণ্ডিত” নিযুক্ত করিলেন। ধাৰ্য্য হইল যে, তিনি সপ্তাহে একদিন করিয়া দেওয়ান গৃহে উপস্থিত হইবেন। নিত্যানন্দ আজীবন দেওয়ানের দ্বারপণ্ডিত ছিলেন। যে দিন তিনি দেওয়ানের গৃহে যাইতেন, তাহার প্রত্যেক বারই তিন টাকা করিয়া বিদায় পাইতেন। শেষকালে তিনি মহাদেবী বড়কাপনের শ্যাম সুন্দর ভট্টাচাৰ্য্যকে নিজ পদে রাখিয়া অবসর গ্রহণ করেন । নিত্যানন্দের একটি ষাড় ছিল, তিনি ষাড়টাকে বাধাইয়া লওয়াতে দেশীয় পণ্ডিত মণ্ডলী তাহাকে দোষী সাব্যস্ত করেন, ইহাতে সমাগত পণ্ডিতবর্গের সহিত শাস্ত্র বিচার হয়; ইটার প্রসিদ্ধ