পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৯ পণ্ডিত রাজগোবিন্দ সাৰ্ব্বভৌম প্রভৃতি বিচার সভায় উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কিছু ..., - । হওয়াতে, মীমাংসার জন্য নবদ্বীপে লেখা হয়। নবদ্বীপের পণ্ডিতবর্গ নিত্যানন্দের মীমাংসারই পক্ষে মত দেন। ইহাতে দেশীয় পণ্ডিতবর্গ নিত্যানন্দের পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইয়া প্রসন্ন চিত্তে সকলে তাহাকে “নিমাই পণ্ডিত” উপাধি প্রদান করেন। নিত্যানন্দ ঘোষ, নদীয়ার নিমাই পণ্ডিতের পার্ষদ বংশীয়, “নিমাই পণ্ডিত” উপাধিটি সেই সম্বন্ধ সূচক বোধ হয়। প্যারীচরণ দাস প্যারীচরণ দাস সাহু বংশে লাতুর মোনশী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ইনি পূৰ্ব্ব বর্ণিত মোনশী গোরীচরণের ভ্রাতুষ্পপুত্র। তাহার পিতার নাম শ্যামচরণ দাস’। প্যারীচরণ যে কবি প্রতিভা লইয়া জন্ম গ্রহণ করেন, বালক-কাল হইতেই তাহার পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। যখন তিনি ৬/৭ বৎসরের বালক তখন বড়ই চঞ্চল ছিলেন, সেই সময় মৈনা গ্রামে তদীয় জ্যৈষ্ঠ সহোদরার গৃহে একদা গিয়াছিলেন, তিনি এবং অন্যান্য বালকদল তথায় একত্রিত হইয়া একদা কোলাহল করাতে, তদীয় সহোদরার বর্ষীয়সী শাশুড়ী গোলমাল ত ইহাদিগকে ধমক দিলে, প্যারীচরণ সেই প্রবীণাকে নিম্নোক্ত কথা বলিয়া তথা হইতে পলায়ন করেন, যথাঃ– “ভেউ ভেউ করিও না, কথা কহিও কম। নিশ্চয় জানিও বুড়ি আমি তোমার যম।” অন্যান্য বালকেরাও তখনই ইহা কণ্ঠস্থ করিয়া বৃদ্ধাকে ক্ষেপাইয়া তুলিয়াছিল। ইহার বৎসর তিনেক পরে পুনঃ পুনঃ তিনি ভগিনী-গৃহে আগমন করেন। তখন তাহার চাঞ্চল্য অনেকটা তিরোহিত হইয়াছে। ঐ সময় বারুনীযোগে সেই গ্রামের অনেকেই, প্রায় পাচ ক্রোশ দূরবত্তী মাধবতীর্থে (জলপ্রপাত) গমন করেন, প্যারীচরণ প্রমুখ কয়েকটি বালকও এবং মাধব উপস্থিত হইলে, একটি কবিতা বলিতে তাহারা অনুরোধ করিলে তিনি তৎক্ষণাৎ নিম্নলিখিত কবিতা রচনা করিয়া দিয়াছিলেনঃ– “পৰ্ব্বত উপরে বসে মাধব সোণার; রূপা গলাইয়া সেই ঢালে দুইধার। অসুর শয়নে ছিল পুড়ি হৈল ছাই; শিলারূপে হাড় তার দেখিতেই পাই৷ ইহাতে যদিও শব্দ বিন্যাসাদি নাই, তথাপি ইহা যে মাধব জল প্রপাতের একটি সরল ও প্রকৃত বর্ণনা, যাহারা মাধব গিয়াছেন, তাহারাই তাহা বুঝিতে পারবেন।৮৬ প্যার বাবু যখন পাঠ্যাবস্থায়, তখন জনৈক বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে "মিত্র বিলাপ" নামে একটি সুন্দর কবিতা রচনা করিয়া একমুদ্র পুস্তিকাকারে তাহা প্রকাশ করেন (১৮৭০ খৃঃ); ইহাই তাহার প্রথম পুস্তক। এই সময় তিনি কলিকাতায় ছিলেন। ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে তিনি শ্রীহট্ট মিশন স্কুল হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলিকাতায় শিক্ষার্থ গমন করেন, কিন্তু তথায় ইণ্ডিয়া আফিসের পররাষ্ট্র বিভাগে একটি কেরাণীগিরি কার্য্য পাওয়ায়, অধিক অধ্যয়নে অগ্রসর হইতে পারেন নাই। কেরাণীর কাৰ্য্যে তিনি যেরূপ কৃতিত্ব প্রদর্শন করিয়াছিলেন, তাহাতে দ্রুতগতি উন্নতিপথে ধাবিত হইতেন, চড মাধব" আদম আইল ন; পাথারিয়া পাহাড়ের প্রসিদ্ধ জলপ্রণত, প্রায় দ্বিশত হস্ত উৰ্দ্ধ হইতে দুইটি জলধারা নিম্নে পতিত হইয়া, তাহা একবাটি পাৰ্ব্বতা স্রোতা রূপে একদিকে চলিয়া যাইতেছেঃ ঐ স্রোতের বুকে অসংখ্য প্রস্তর খণ্ড সমূহ। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বংশ ১ম ভাঃ ৯ম অধ্যায়ে ইহার বিস্তৃত বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে।