পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ ধৃত না করায়, মেনেজারের উদ্যোগে তাহার উপর উৎকোচ গ্রহণের মোকদ্দমা উপস্থিত হয়, কিন্তু বিচারে তিনি নির্দোষ প্রতিপন্ন হন। পূৰ্ব্বেই তাহার মনে একরূপ বৈরাগ্য উপস্থিত হইয়াছিল, এই ঘটনার পর তিনি স্বেচ্ছাতঃ কৰ্ম্মত্যাগ করেন, এবং অল্প কিছুদিন দেশে অবস্থিতির পর বাটী ত্যাগ করিয়া প্রথমতঃ নবদ্বীপে ও তাহার অল্পকাল পরেই বৃন্দাবনে চলিয়া গেলেন। তাহার ধৰ্ম্মানুরাগ নিস্পৃহতা, বৈরাগ্যাদি দর্শনে স্বগীয় গোবিন্দদেবের সেবাধিকারী প্রীত হইয়া স্বগীয় গোবিন্দের বাড়ী হইতে তাহাকে প্রতিদিন প্রসাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়া দেন; তিনি নিশ্চিন্তে বসিয়া সাধন ভজন করিতেন। পরবর্তী কালে তিনি ভেখাশ্রয়পূৰ্ব্বক নরোত্তম দাস নামে খ্যাত হন ও মনের আনন্দে ধৰ্ম্মজীবন যাপন করিয়া “বৃন্দাবন প্রাপ্ত” হন। ভগবানের মঙ্গলময় বিধানের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকিলে যে, তাহাই মানবের জীবনতরি সুপথে চালিত করিয়া থাকে, লবকিশোরের জীবন তাহার এক দৃষ্টান্ত স্থানীয়। লেঙ্গটা বাবা আগিয়ারাম পরগণার চক্রবাণী বাসী হুলাস পাটুনীর পুত্র অৰ্জ্জুন বাল্যকালে রাখালদের সঙ্গেই সময়াতিবাহিত করিত। রয়োধিক হইলে “রামায়নী গানে" যোগ দিতে অৰ্জ্জুনের বড়ই আগ্রহ ছিল । এখনও অনুন্নত সমাজে চরহাতে লইয়া রামায়ণী গাইবার প্রথা বিলুপ্ত হয় নাই। অৰ্জ্জুনের পিতার ইহাতে সম্মতি ছিল না বলিয়া অৰ্জ্জুনের গানে যাওয়া হইল না, পিতৃ অভিপ্রায়ে তাহদের কাপড়ের ক্ষুদ্র দোকানেই তাহাকে ব্যাপৃত থাকিতে হইল। প্রতিবেশী কিশোর পাটুনীর বাড়ীতে গানের "তালিম" (শিক্ষা) হইত, অৰ্জ্জুন গোপনে মধ্যে মধ্যে তথায় গিয়া যোগ দিত। একদা কিশোরের গৃহ হইতে একটি “ঝাঁপি" (বেত্ৰ নিৰ্ম্মিত পেটিকা) অপহৃত হয়, উহাতে গহনা পত্রাদি ছিল । বাড়ীর লোকেরা অৰ্জ্জুনের উপরেই সন্দেহ করিল। অৰ্জ্জুনকে তাহারা চুরির কথা জানাইলে অৰ্জ্জুন বিক্ষিত ও দুঃখিত হইয়া কিশোরের গৃহে যাওয়া বন্ধ করিল। ইহাতে কিশোরদের মনে সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হইল এবং তাহারা রীতিমত থানায় এজাহার দিল । পোলিশ তদন্তে আসিলে, কিশোরদের ষড়যন্ত্রে ছেড়াজাল পূর্ণ একটা ঝাপি অৰ্জ্জুনদের গৃহের সন্নিকট-বত্তী জলপূর্ণ খানা হইতে, কিশোরদের লোক কর্তৃকই উত্তোলিত হইল, ফলে চোর বলিয়া অৰ্জ্জুনকে হাজতে প্রেরণ করা হইল । কাল মাহায্যে প্রথমতঃ মিথ্যারই জয় দৃষ্ট হইতে লাগিল, অৰ্জ্জুন আত্মরক্ষার উপায় না দেখিয়া হাজত হইতে পলায়ন করিল কিন্তু কিছুদূর যাইতে না যাইতেই ধৃত হইয়া বিচারে দেড় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ প্রাপ্ত হয় । কারামুক্তির পর দেশে আসিলে অৰ্জ্জুনের ভাবান্তর দৃষ্টে সকলেই মনে করিল, লজ্জায় অৰ্জ্জুন কাহারও সহিত কথা কহিতেছে না। কিন্তু তাহার ভাব ছুটিল না বরং দিন দিন বদ্ধিত হইতে লাগিল । দেখিতে দেখিতে অৰ্জ্জুন পাগল হইল—ক্ষণে হাসে, ক্ষণে কাদে, ক্ষণে বা চিৎকার করিয়া উঠে; তবে কাহারও প্রতি কোন অত্যাচার করে না, কাহাকেও কোন কথা বলে না। কিছুদিন মধ্যেই অৰ্জ্জুন পরিধেয় বসন ত্যাগ করিয়া লেঙ্গটা হইয়া রহিল, বস্ত্র দিলেও ফেলিয়া দিত । একদিন একজন মোসলমান, অকারণে লাঠির আঘাতে অৰ্জ্জুনের মাথা ফাটাইয়া দিল—রক্তপাত হইতে লাগিল । দর্শকগণ অকারণে প্রহারকারী লোকটাকে শাস্তি দিতে অগ্রসর হইল, কিন্তু পারিল না অৰ্জ্জুন বাধা দিয়া লোকটাকে রক্ষা করিল। তখন লোকেরা বুঝিতে পারিল যে অৰ্জ্জুনের হাস্য ক্ৰন্দনাদি বায়ুর বিকৃতিজনিত নহে। সেই দিন হইতে অৰ্জ্জুনের পাগল