পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড পরমানদের বংশীয়গণ হইতেই ঢাকাদক্ষিণের মিশ্রবংশের বিস্তৃতি। জগন্নাথ মিশ্র অতি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন বলিয়া তিনি পিতা কর্তৃক বিদ্যাশিক্ষার্থ নবদ্বীপে প্রেরিত হইয়াছিলেন । রত্নগৰ্ভ প্রসঙ্গ এই সময়ে নবদ্বীপে শ্রীহট্টবাসী অনেকেই বাস করিতেন, কেহবা বিদ্যার জন্য, কেহবা গঙ্গাবাস হেতু। এই সকল নবদ্বীপ প্রবাসী ব্যক্তিদের মধ্যে রত্নগৰ্ভ আচাৰ্য্য প্রধান। শ্রীচৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছেঃ— “রতুগর্ভ আচাৰ্য্য বিখ্যাত তার নাম । প্রভুর পিতা সঙ্গে জন্ম এক গ্রাম॥ তিন পুত্র তার কৃষ্ণ-পদ-মকরন্দ কৃষ্ণানন্দ, জীব, যদুনাথ কবিচন্দ্র। ঢাকাদক্ষিণ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের স্থান, পণ্ডিতবর্গের বহু টােল ঢাকাদক্ষিণের গৌরব বৃদ্ধি করিত:8 রত্নগর্ভের বংশীয়গণ এথাকারই অধিবাসী; তাহারা বাৎস্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন । নবাগত জগন্নাথ মিশ্র সহ রত্নগর্ভের বিশেষ সদ্ভাব ছিল এবং উভয়েই নবদ্বীপের এক স্থানেই বাস করিতেছিলেন । রত্নগৰ্ভ শ্ৰীমদ্ভাগবতের পণ্ডিত ছিলেন, নবদ্বীপে তাহার ভাগবতের টোল ছিল। অনেক ছাত্রকে তথায় তিনি ভাগবত শিক্ষা দিতেন । তিনি অধ্যাপনা উপলক্ষে নবদ্বীপবাসী হইয়া থাকিলেও ঢাকাদক্ষিণেই তাহার মূল বাড়ী ছিল, তাহার বংশীয়গণ ঢাকাদক্ষিণেই ছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাহারা রত্নগর্ভের জ্যেষ্ঠপুত্র কৃষ্ণানদের নামে বংশপরিচয় দিয়া আসিতেছিলেন; প্রায় চল্লিশ বৎসর হইতে চলিল, উক্ত “কৃষ্ণানন্দ ভট্টের গোষ্ঠী” লোপ পাইয়াছে ৫ তাহার দৌহিত্র, বংশীয়গণ এখনও তত্ৰত্য রায়গড় গ্রামে বাস করিতেছেন। পঞ্চখণ্ডস্থ মিশ্রবংশীয় প্রখ্যাতনামা বিষ্ণু মিশ্রের পুত্র স্বগীয় রামলোচন মিশ্র ঐ বংশে বিবাহ করেন, পরে শ্বশুর বংশ লোপ হইলে সস্ত্রীক তথায় গমন করেন ও তত্ৰত্য অধিবাসী রূপে গণ্য হন। কৃষ্ণানন্দের কনিষ্ঠ ভ্রাতা যদুনাথ কবিচন্দ্র প্রসিদ্ধ পদকৰ্ত্ত কবি ছিলেন, পদকল্পতরু প্রভৃতি সংগ্রহ গ্রন্থে ইহার বহুতর সুললিত পদাবলী দেখিতে পাওয়া যায়। যদুনাথ কবিচন্দ্র নিত্যানন্দ শাখাভূক্ত ছিলেন; যথাঃ– "মহাভাগবত যদুনাথ কবিচন্দ্র। যাহার হৃদয়ে নৃত্য করে নিত্যনন্দ।"- V,DVඵ S\ס|a|\ס | ৪. ঢাকাদক্ষিণ তৎকালে যে এক পণ্ডিত প্রধান স্থান ছিল, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (পূৰ্ব্বাংশ) ২য় ভাগ ২ খণ্ড ৭ম অধ্যাযে তাহা বর্ণিত হইয়াছে। পরবর্তী ৫ম অধ্যায়ে ঢাকাদক্ষিণের নামতত্ত্ব কথিত হইবে । ৫. এস্থলে একটি বিলুপ্ত বৈদ্য বংশের কথা প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ করিতে হইতেছে । উক্ত বাৎস গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণের গুপ্ত খ্যাতি বিশিষ্ট এক ঘর যজমান ছিলেন । উক্ত যজমানদের শেষ বংশধর ধনবামের বিধবা পত্নী, পুরোহিতবর্গের শেষ বংশধর রুদ্রকান্ত ভট্টাচার্যকে তাহাদের ভূ-সম্পত্তি দান করিয়াছিলেন । এতদ্ব্যতীত বৰ্ত্তমান ঠাকুরবাড়ীর পূৰ্ব্বদিকে মিশ্র বংশীয় বর্গের যজমান আর একটি বিলুপ্ত বৈদ্যবংশেব কথা শুনা যায়। কাহারও কাহারও মতে এই গুপ্ত বংশেই মুরারি গুপ্তের উদ্ভব । মুরালি গুপ্তের বংশ পরিচয় সম্বন্ধে পরবর্তী ৬ষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য।