পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপসংহার শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭৩ ইহার উদাহরণ—দ্বিতীয় পৃথিবীতে নাই। এইরূপে প্রভুর যখন অবস্থা, তাহার সাড়া শব্দ না পাইয়া একরাত্রিতে ভক্তগণ কপাট খুলিয়া দেখেন যে তিনি গৃহে নাই। অমনি তাহারা মশাল জুলিয়া সন্ধানে বাহির হইলেন ও খুজিয়া সিংহদ্বারের পার্শ্বে চেতনাবিহীনাবস্থায় তাহাকে প্রাপ্ত হইলেন। ভক্তগণের শুশ্রুষার বহুক্ষণে প্রভুর জ্ঞান সঞ্চার হইল। শ্রীচৈতন্য আর একদিন চটকপৰ্ব্বত দেখিয়া গোবৰ্দ্ধন ভ্ৰমে বাহ্যবিরহিত হইয়া বায়ুবেগে ধাবিত হইলেন, কিছুদূরে গিয়া গতিস্তম্ভ হইল এবং লোমকূপ হইতে শোণিত প্রবাহ ছুটিল। ভক্তগণের শুশ্রুষায় পরে তিনি চেতনাপ্রাপ্ত হইলেন। এইরূপ অবিরতই ঘটিতে লাগিল। একরাত্রে প্রভু সমুদ্রদর্শনপূৰ্ব্বক যমুনাভ্রম হওয়াতে “হা কৃষ্ণ” বলিয়া তাহাতে ঝাপ দেন, খুঁজিতে খুজিতে ভক্তগণ সমুদ্রের তীরে উন্মত্তপ্রায় এক জালিককে দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন। মৎস্যজীবী বলিল যে সে প্রভুর কথা বলিতে পারবে না; সে একটা ভূত স্পর্শ করিয়াছে, তাহার মুখে গো গো ধ্বনি, হস্তপদ অসম্ভব দীর্ঘ। ভক্তগণ বুঝিলেন—ভাবের বিকারে শ্রীচৈতন্যের অস্থি সন্ধি আলগিয়া গিয়া হস্তপদ যেরূপ বিস্তারিত হইয়া থাকে, জালিক তাহাই বলিতেছে; ইনি তাহাদেরই প্রাণের আরাধ্য দেবতা। তখন তাহারা জালিককে প্রকৃতিস্থ ও ভয়বিহীন করিয়া সেই স্থানে লইয়া গেলেন ও প্রভুকে প্রাপ্ত হইলেন। ভক্তগণ তাহার আর্দ্র বস্ত্র দূর করিয়া কর্ণে কৃষ্ণ ধ্বনি ও কীৰ্ত্তন করিতে লাগিলেন; তৎশ্রবণে তাহার চেতনা হইল ও তিনি ভক্তবর্গসহ বাসায় আসিলেন। এই দিন হইতে ভক্তগণ তাহার শয়নের এক ব্যবস্থা করিলেন; তিনি যেন ভাবের আবেশে গৃহের বাহির হইতে না পারেন, এইরূপ বন্দোবস্ত করিলেন; শঙ্কর প্রভুর পায়ের নীচে শয়ন করিতেন, ইহাতে “প্ৰভু পদোপাধান” বলিয়া শঙ্করের উপনাম হইয়াছিল। এই ব্যবস্থার পর আর শ্ৰীমহাপ্রভু বাহিরে চলিয়া যাইতে পারেন নাই। এইরূপ নিৰ্জ্জনে শ্রীচৈতন্যদেব ৪৮ বৎসর বয়সে কৃষ্ণপ্রেমে বিহবল হইয়া একদিন শ্রীজগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। সেই যে গেলেন, আর তিনি ফিরিয়া আসিয়া ভক্তগণকে আনন্দ দান করিলেন না, আর তিনি "হা কৃষ্ণা" বলিয়া ক্ৰন্দন কি প্রলাপ করিলেন না। জগতে নিমাইয়ের জন্ম দিন, সেই একদিন, আর এই একদিন—১৪৫৫ শকের আষাঢ় মাসের সপ্তমী তিথি । তাহার পর আর কিছু বলিব না। প্রভু যান নাই, আজিও আছেন, যে তাহার বিচিত্র কাহিনী, ইহা ভাবিয়া এস ভাই, সকলে জীবন পবিত্র করি; ইহাতে এসব কথা প্রত্যক্ষবৎ নয়নসমক্ষে প্রতীয়মান হইবে; তাহাকে দর্শন করিয়া কৃতকৃতাৰ্থ হওয়া যাইবে। “অদ্যাপিও সেই লীলা করে গৌর রায় । কোন কোন ভাগ্যবান দেখিবারে পায়৷" —শ্রীচৈতন্য ভাগবত । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশে চতুর্থভাগ সমাপ্ত ইতি শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ সম্পূর্ণ। সমাপ্তোয়ং গ্রন্থঃ । সৰ্ব্বমিদং শ্ৰী গৌরাঙ্গ সমৰ্পিতমস্ত । ৩০শে চৈত্র—১৩২০ বাংলা ।