পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ চক্রান্তে তাহার গৃহ দাহ হয়। ইহার পর হইতে মধ্যে মধ্যে তাহার রক্ত বমন হইত; তিনি লিখিয়া গিয়াছেন ঃ “রুধির শ্ৰবিয়া অঙ্গে কৈল হীনবল । দারুণ কাৰ্ত্তিক মাসে হইলাম আচল॥ এই হইতে নৈরাশ আমি হৈলাম নিরানন্দ॥” ইত্যাদি এই দারুণ রক্তবমনই বিষাদময় কবির দুঃখময় জীবন অবসান করে, ইহাতেই ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয়। তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র শ্রীযুক্ত রামতারক দেশমুখ্য মহাশয় হইতে এই বংশ কথা প্রাপ্ত হইয়াছি।১ হাইলাকান্দির ব্রাহ্মণ বংশ বংশ কথা । কাছাড়ের ব্রাহ্মণ বিবরণ বলিতে গেলেই কৌণ্ডিল্য গোত্রীয়গণের কথা সৰ্ব্বাগ্রেই স্মরণ হয়। পাশ্চাত্য বৈদিক যজুৰ্ব্বেদী ব্রাহ্মণ বংশে কৌণ্ডিল্য গোত্রে কাছাড়ের উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বনামধন্য হরিচরণ রায় বাহাদুরের উদ্ভব হইয়াছিল। তাহার পূৰ্ব্বপুরুষগণ এদেশবাসী ছিলেন না। রায় বাহাদুরের সুযোগ্য পুত্র শ্রীযুক্ত হরকিশোর চক্রবত্তী মহাশয় আমাদিগকে জানাইয়াছেন যে ১৬ পুরুষ পূৰ্ব্বে তাহাদের বংশের আদি পুরুষ রাঘবরাম ফরিদপুরের কৌটালীপাড়ে ছিলেন। রাঘবের চারি পুত্র ছিল; কোন অজ্ঞাত কারণে ইহাদের পরবৰ্ত্তিগণ মধ্যে কেহ তথা হইতে বিক্রমপুরের কাচাদিয়াতে আগমন করিয়াছিলেন। “শুনা যায় যে, বিক্রমপুরের ইছাপুরায়” তাহাদের জ্ঞাতি বংশীয়গণ অদ্যাপি আছেন। রাঘবের ১১শ পুরুষে উমাকান্ত তর্কবাগীশ নামে এক পণ্ডিত ছিলেন, তাহার বাঞ্ছারামের রামেশ্বর, রামজীবন ও রামচন্দ্র নামে তিন পুত্র ছিলেন। কাচাদিয়া ইহাদের সময়ে পদ্মাগর্ভস্থ হইয়া পড়িলে, ইহারা তথা হইতে শ্রীহট্টের বাণিয়াচঙ্গে আসিয়া বাস করেন। কিছুদিন বাণিয়াচঙ্গে বাস করার পর রামজীবন কৌড়িয়া পরগণায় গমন করেন; অপর ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে একজন বাণিয়াচঙ্গেই স্থায়ীরূপে থাকেন এবং অন্যতর তরফে চলিয়া যান। আমাদের বিবরণ প্রদাতা শুনিয়াছেন যে তরফে এখনও এই বংশীয় কেহ কেহ আছেন। বাণিয়াচঙ্গের জাতুকৰ্ণ গোত্রীয়গণ উক্ত কৌণ্ডিল্য গোত্রীয়গণ গুরু বংশীয় বটেন । বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণগণের মধ্যে কৌণ্ডিল্য গোত্রীয়গণ বেশ সম্মানিত ছিলেন। দুঃখের বিষয় যে বাণিয়াচঙ্গের বংশশাখা প্রায় নিৰ্ম্মল, একটি ঘর মাত্র আছে। রামজীবনের পুত্রের নাম কামদেব; ইহার পুত্র জগন্নাথ তর্কবাচষ্পতি। কৌড়িয়াতে রামজীবন ভদ্রাসন স্থাপন করিলেও, তাহার বংশ তথায় স্থায়ী হয় নাই। ইহার শ্রীহট্ট পরিত্যাগ করিয়া কাছাড়বাসী হন। কিন্তু কাছাড়েও তখন তাহাদের আর্থিক অবস্থা উন্নত ছিল না; কাছাড়ে প্রথম জগন্নাথের পুত্র “সৰ্ব্বানন্দ শৰ্ম্মার দেড়হাল পরিমিত ভূমির শস্যমাত্র জীবিকা নিৰ্ব্বাহের সম্বল ছিল।”২ সৰ্ব্বানন্দের ছয়পুত্র, যথা—সম্পদরায়, রামশরণ, রামচরণ, কৃষ্ণচরণ, নীলমণি ও হরিচরণ। ১. ১৩২১ বাং পৌষ মাসের প্রতিভা পত্রে কবির জীবন কাহিনী সহ তৎকৃত বারমাসী প্রকাশিত হইয়াছে। আমরা রামতারক বাবুর নিকট শুনিয়াছি যে কবির কৃত ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দের ভূকম্পের একটি সুন্দর কবিতা আছে, কিন্তু কীটদষ্ট হওয়াতে উহা অপাঠ্য হইয়াছে। ২. উদ্ধৃত অংশ সুরমা ১৩১৯ বাং ১০ই আষাঢ় হইতে গৃহীত।