পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বুরুঙ্গা, রেঙ্গা ও ঢাকাদক্ষিণের ব্রাহ্মণ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৭ বায়ু বহির্গত হইয়া গিয়াছে! মহেশ্বরের মৃত্যু সেই দিনকার ঘটনা। কেবল মহেশ্বরের বলিয়া নহে,-“সদাশিবের আজ্ঞা আছে, এবংশ সাধ বৰ্জ্জিত হইবে না।” বাস্তবিক একথার সফলতা এযাবৎ প্রত্যক্ষীভূত হইতেছে; একজন সাধক এবংশে থাকেনই। উদাহরণ স্থলে “রামকান্ত মুনিগোসাই" এবং শ্যামচরণ চৌধুরী ও স্বগীয় চন্দ্রকান্ত ব্রহ্মচারী প্রভৃতির নাম করা যাইতে পারে। ইহারা তিনজনই চিরকুমার ছিলেন। বৰ্ত্তমানের স্বনাম-ধন্য শ্ৰীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় বংশের ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করিতেছেন। সেই বিদেশেও তিনি সম্পূজিত হইতেন। তরফ-বড়কাশি গ্রাম হইতে নন্দনপুর হাটে যাইবার পথে “মুনিগোসাইর গাছ” নামে পরিচিত এক প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ আছে। এই বট মুনিগোইর রোপিত; ইহারই পার্শ্বে তিনি দিবারাত্রি জপে অতিবাহিত করিতেন এবং তাহাতে "মুনিগোসাই” বলিয়া খ্যাত হন। চন্দ্রনাথ একদা নিজ ভ্রাতাকে রক্ষা করিতে গিয়া একটা মিথ্যা কথা বলিয়াছিলেন, তজ্জন্য তিনি অনুতাপানলে দগ্ধ হইতে থাকেন, অন্ন জল ত্যাগ করেন, ও শয্যা আশ্রয় করিতে হয়; ইহাতে অচিরেই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। একটা মিথ্যা কথা তাহার কাছে কঠোর বজ্রসদৃশ অথবা পৰ্ব্বত পাতের ন্যায় বোধ হইয়াছিল, ইহা তাহার নিৰ্ম্মল অন্তঃকরণকে একবারে নিষ্পিষ্ট করিয়া ফেলিয়াছিল। এ বংশ শক্তিমন্ত্রের উপাসক; একজন মাত্র নাম চণ্ডা চরণ, জ্যেষ্ঠের সহ বিরোধক্রমে ভেখ গ্রহণে বৈরাগী হইয়া খাড়ু কোণা গ্রামে আখড়া করিয়াছিলেন।8 গৌতম গোত্ৰীয়ের কথা বেগমপুরে ঘৃতকৌশিক গোত্রীয় চৌধুরী? বংশীয়গণ ব্যতীত গৌতম গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ প্রায় ৯/১০ পুরুষ যাবৎ বাস করিতেছেন। এই বংশে উমাপতি বিদ্যানিবাস এবং বিনোদপণ্ডিত বিশেষ খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন । এই বংশীয় জয়গোপাল যোগানুষ্ঠান করিতেন, তাহার যোগশক্তির বিবিধ জনশ্রুতি এখনও শুনা গিয়া থাকে। ইহার নামেও তদ্বংশীয়গণ অমাবস্যায় চন্দ্রেদয়ের গল্প করিয়া থাকেন। এতদ্ব্যতীত পরাশর, রথীতর ও শাণ্ডিল্য প্রভৃতি আরও কতিপয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ তথায় আছেন। ব্রজসুন্দর ভট্টাচাৰ্য্য—বুরুঙ্গাবাসী ব্রজসুন্দর ভট্টাচাৰ্য্য কাশীধামে চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত হন ও জনৈক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সম্মিলিত হইয়া আগরা শহরে এক ঔষধালয় স্থাপন করেন; পরে ৪. আদিদেব হইতে বৰ্ত্তমান পর্যন্ত ২৪ পুরুষ চলিতেছে, সুতরাং আদিদেবের আগমন কাল আট শত বৎসর পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত বলিতে আপত্তি নাই। শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের মতে আদিদেবের আগমন কাল আরও পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত, তিনি বলেন-“তিনপুরুষ শতাব্দীর গণনা আধুনিক প্রণালী। পূৰ্ব্বকালে লোক এত অল্পায়ু ছিল না।" ৫. উপাধি দানের ক্ষমতা এই চৌধুরী বংশের বিবরণ উপলক্ষে এস্থলে একটা কথা আলোচ্য হইতেছে,-চৌধুরী খেতাব নবাব সরকার হইতে প্রদত্ত হইত। চান্দখা কি প্রকৃতই নবাব ছিলেন চান্দখা যে শ্রীহট্টের শাসনকর্তৃক পদাভিষিক্ত ছিলেন না, তাহা তাহার বিবরণ হইতেই জানা যায়, তবে সাধারণতঃ তিনি নবাব বলিয়া পরিকথিত হইতেন । নিকটবৰ্ত্তী মোক্তারপুর পরগণায় যে মোসলমান জমিদার বংশীয়গণ আছেন, চান্দখা তাহাদের পূৰ্ব্বপুরুষ হইলেও হইতে পারেন। চান্দখা যে একজন প্রতাপশালী ভূম্যধিকারী ছিলেন, উপাধিদান ক্ষমতা তাহার পরিচায়ক। রাজার নবাবকল্প ভূম্যধিকারিগণও কখন কখন এ উপাধি দান করিতেন ও পরে তাহা স্থানীয় শাসনকৰ্ত্তার যোগে বা অনুমোদনে বহাল করাইয়া দিতেন। এস্থলে রেঙ্গার মোসলমান জমিদার কর্তৃক ভরদ্বাজগোত্রীয় রামকৃষ্ণকে “রাজপণ্ডিত" বিষয় দানের কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। অতঃপর তাহা উল্লেখিত হইতেছে রাজদত্ত চৌধুরী প্রভৃতি উপাধির অর্থাদি বিচার পূৰ্ব্বাংশে “নবাবি আমলে দেশের অবস্থা" প্রকরণে বর্ণিত হইয়াছে। ব্রাহ্মণের জাতীয় উপাধির প্রসঙ্গ এ অংশের উপক্রমণিকায় কথিত হইয়াছে, তাহা দ্রষ্টব্য ।