পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম অধ্যায় ; বনভাগ প্রভৃতি স্থানের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৩ পট্টবস্ত্র পরিধান পূৰ্ব্বক প্রজ্বলিত চিতারোহণে সমুদ্যতা হন, সমাগত ব্যক্তিবর্গ তখন সতীর জয়ধ্বনি করিয়া পুষ্পবর্ষণ করিতে লাগিল। সারদা দেবীর জনৈক আত্মীয় তৎক্ষণাৎ একজোড়া খড়ম আনিয়া রাখিলেন, তাহার অভিপ্রায় মত সতী তাহাতে পদস্পর্শ করিলেন; আর তাহার পর পতির চিতারোহণে তিনি নারী-ধর্মের মহিমা সূচক উদাহরণ প্রদর্শন করিলেন। সতীর পদম্পূষ্ট সেই পূত-পাদুকা এখনও তদ্বংশে পূজিত হইয়া সতী মাহাত্ম্য কীৰ্ত্তিত করিতেছে। ব্রাহ্মণ শাসনের চক্রবর্তী বংশ আখালিয়ার ব্রাহ্মণ শাসনের মৌলিক অধিবাসী বলিয়া ভরদ্বাজ গোত্রীয়গণ গৌরব করিয়া থাকিয়া থাকেন। ইহাদের পূৰ্ব্বপুরুষ কামদেব বিদ্যালঙ্কার রাঢ়দেশ হইতে এস্থানে আগমন করেন। কিন্তু এ বংশে জনবলের হীনতা প্রযুক্ত ইহাদের পূৰ্ব্ব প্রভাব হ্রস্বতা প্রাপ্ত হইয়াছে। এ বংশীয়গণ আখালিয়ার দাস মজুমদারের সাহায্যে “রাজপণ্ডিতি” প্রাপ্ত হন ও ক্রমশঃ ক্ষমতা বৃদ্ধির সহিত শ্ৰীহট্ট জিলার অনেকটি পরগণায় রাজপণ্ডিত নিযুক্ত হন। কামদেবের অধস্তন ত্রয়োদশ পুরুষে রমাকান্ত চক্রবত্তী নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুর হইতে ২ জলুসের এক সনন্দে (নং ১৮৮) পং হাউলি সোণাইতাতে ৩/১॥ এবং পং কৌড়িয়াতে ১৩/ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন; ১১৮২ সনে তাহার মৃত্যু হইলে এই ভূমি তাহার পুত্র শ্রীকান্ত চক্রবর্তী ভোগ করেন। শ্রীকান্তের পুত্র কান্তরাম চক্রবত্তী ভোগ করেন। শ্রীকান্তের পুত্র কান্তরাম চক্রবর্তী লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময় এই ভূমি একটি নিষ্কর পাট্টাতে বন্দোবস্ত করেন। কান্তরামের প্রপৌত্র কমলাকান্ত, কমলাকান্তের প্রপৌত্রের নাম দীননাথ পণ্ডিত, দীননাথের পৌত্রের নাম রমণী চক্রবত্তী, ইহার পুত্র শ্ৰীযুত রমেশ চন্দ্র চক্রবত্তী জীবিত আছেন। বরমচালাগত ভট্টাচাৰ্য্য বংশ রামহরি ভট্টাচার্য্যের বাস আখালিয়ার ব্রাহ্মণ শাসন; কিন্তু রামহরির পূৰ্ব্বপুরুষগণ এস্থানবাসী ছিলেন না। রামহরির বৃদ্ধ প্রপিতামহ রামদেব ভট্টাচাৰ্য্য ও অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহ মনসুর উল মূলক বাহাদুর হইতে বরমচালে যথাক্রমে ১২॥০ এবং ড়ে ভূমি দেবত্র প্রাপ্ত হন। ১৭৬৬ খৃষ্টাব্দে রামদেবের মৃত্যু হইলে তাহার পুত্র জগন্নাথ ভট্টাচাৰ্য উক্ত ভূমি “তছরূপ" করেন। রামদেবের সনন্দ পাঠে জানা যায় যে তিনি চারি কেদার জঙ্গল ভূমি পাইবার প্রার্থনা করিলে উহা গ্রাহ্য হইয়াছিল। রামহরির বিবাহ ব্রাহ্মণ শাসনে হয়, শ্বশুরকুলে বংশাভাব হওয়াতে তিনি এখানে আসেন, তাহার পুত্র মাতামহ সম্পত্তির অধিকারী হইয়া এখানকার অধিবাসীরূপে গণ্য হন। পরগণা-দুলালী শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশ দুলালীর সামবেদী শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ধরাধর মিশ্র তত্ৰত্য লস্কর নারায়ণ দাসের১২ গুরু ছিলেন । ধরাধরের পুত্র ও পৌত্রের নাম জ্ঞাত হওয়া যায় নাই, তাহার প্রপৌত্রের নাম বিদ্যাবল্লভ। ইহার দুই পুত্র-৩ হইতেই এই বংশের বিস্তৃতি ঘটে। এ বংশে অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির উদ্ভব হয়। অনেকেই তাহাদের নিকট হইতে শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। ভিন্ন দেশীয় ভূপতিবৃন্দও তাঁহাদের পাণ্ডিত্যাদি বিবিধ গুণগ্রামে মোহিত হইয়া ১২. ইহার বিষয় পরে কথিত হইবে।