পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
সংকলন

হেই খুড়ো, তোর পায়ে ধরি।
থুয়ে আয়গা মায়ের বাড়ি।
মায়ে দিল সরু শাঁখা, রাপে দিল শাড়ি।
ভাই দিল হুড়কো ঠেঙা, চল্‌ শ্বশুরবাড়ি।

 তখন ইংরেজের আইন ছিল না। অর্থাৎ দাম্পত্য অধিকারের পুনঃ প্রতিষ্ঠার ভার পাহারাওয়ালার হাতে ছিল না। সুতরাং আত্মীয়গণকে উদ্যোগী হইয়া সেই কাজটা যথাসাধ্য সহজে এবং সংক্ষেপে সাধন করিতে হইত। কিন্তু হাল নিয়মেই হউক আর সাবেক নিয়মেই হউক, নিতান্ত পাশব বলের দ্বারা অসহায়া কন্যাকে অযোগ্যের সহিত যোজনা—এতো বড়ে। অস্বাভাবিক বর্বর নৃশংসতা জগতে আর আছে কি না সন্দেহ।

 বাপ-মায়ের অপরাধ সমাজ বিস্মৃত হইয়া আসে, কিন্তু বুড়ো বরটা তাহার চক্ষুশূল। সমাজ সুতীব্র বিদ্রূপের দ্বারা তাহার উপরেই মনের সমস্ত আক্রোশ মিটাইতে থাকে।

তালগাছ কাটম্ বোসের বাটম্ গৌরী এল ঝি।
তোর কপালে বুড়ো বর আমি করব কী।
টঙ্কা ভেঙে শঙ্খা দিলাম, কানে মদন-কড়ি।
বিয়ের বেলা দেখে এলুম বুড়ে৷ চাপদাড়ি।
চোখ খাও গো বাপ মা, চোখ খাও গো খুড়ো।
এমন বরকে বিয়ে দিয়েছিলে তামাক খেগে৷ বুড়ো
বুড়োর হুঁকে৷ গেল ভেসে, বুড়ো মরে কেশে।
নেড়ে চেড়ে দেখি বুড়ো মরে রয়েছে।
ফেন গালবার সময় বুড়ো নেচে উঠেছে।

 বৃদ্ধের এমন লাঞ্ছনা আর কী হইতে পারে।

 এক্ষণে বঙ্গগৃহের যিনি সম্রাট্,—যিনি বয়সে ক্ষুদ্রতম অথচ প্রতাপে