পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রাবণসন্ধ্যা
২৬৯

নেই, সেখানে কোনো কৈফিয়ত কেউ গ্রাহ্য করে না, সেখানেই তার কপালে ছাপ পড়ে যায় ‘নামঞ্জুর’, তখনি বিনা বিলম্বে খসে ঝরে শুকিয়ে সরে পড়তে হয়। প্রকৃতির প্রকাণ্ড আপিসে অগণ্য বিভাগ, অসংখ্য কাজ। সুকুমার ঐ ফুলটিকে যে দেখছ, অত্যন্ত বাবুর মতো গায়ে গন্ধ মেখে রঙিন পোশাক পরে এসেছে, সেও সেখানে রৌদ্রে জলে মজুরি করবার জন্যে এসেছে, তাকে তার প্রতি মুহূর্তের হিসাব দিতে হয়—বিনা কারণে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে-যে একটু দোলা খাবে এমন এক পলকও তার সময় নেই।

 কিন্তু, এই ফুলটিই মানুষের অন্তরের মধ্যে যখন প্রবেশ করে তখন তার কিছুমাত্র তাড়া নেই, তখন সে পরিপূর্ণ অবকাশ মূর্তিমান। এই একই জিনিস বাইরে প্রকৃতির মধ্যে কাজের অবতার, মানুষের অন্তরের মধ্যে শান্তি ও সৌন্দর্যের পূর্ণ প্রকাশ।

 তখন বিজ্ঞান আমাদের বলে, তুমি ভুল বুঝছ— বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ফুলের একমাত্র উদ্দেশ্য কাজ করা তার সঙ্গে সৌন্দর্য-মাধুর্যের যে অহেতুক সম্বন্ধ তুমি পাতিয়ে বসেছ, সে তোমার নিজের পাতানো।

 আমাদের হৃদয় উত্তর করে, কিছুমাত্র ভুল বুঝি নি। ঐ ফুলটি কাজের পরিচয়পত্র নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করে, আর সৌন্দর্যের পরিচয়পত্র নিয়ে আমার দ্বারে এসে আঘাত করে; এক দিকে আসে বন্দীর মতো, আর-এক দিকে আসে মুক্ত স্বরূপে— এর একটা পরিচয় যে সত্য আর অন্যটা সত্য নয়, এ কথা কেমন করে মানব, ঐ ফুলটি গাছপালার মধ্যে অনবচ্ছিন্ন কার্যকারণসূত্রে ফুটে উঠেছে, এ কথাটা সত্য কিন্তু সে তো বাহিরের সত্য; আর অন্তরের সত্য হচ্ছে— আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।

ফুল মধুকরকে বলে, ‘তোমার ও আমার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তোমাকে আহ্বান করে আনব ব’লে আমি তোমার জন্যেই সেজেছি।’ আবার