পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

લેજના * মংবাদ পত্রে সৈনকানের কথা রামমোহনের নিন্দুকদের দ্বারা তাহার মৃত্যুর বহু পরে প্রচারিত হয়—এই মৰ্ম্মে যে-উক্তি মিস কোলেটের রামমোহন-জীবনাতে পাওয়া যায় তাহ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন । পক্ষাস্তরে এই কথা সত্য যে, রাজারামের পুত্র-পরিচয় রামমোহনের জীবিতকাল হইতে চলিয়া আসিয়াছে ; কিন্তু কিভাবে রাজারাম রামমোহনের আশ্রয়ে আসেন, সে বিবরণ রামমোহনের মৃত্যুর পরে প্রথমে দেওয়া হয় । এখন জিজ্ঞাস্ত, এই দুইটি ধারণার মধ্যে কোনটি সত্য হইবার সম্ভাবনা বেশী ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হইলে উপরে বর্ণিত সাক্ষ্যপ্লমাণের আর একটু বিস্তৃত বিশ্লেষণ আবশ্যক। প্রথমেই দেখিতে পাই, রামমোহনের জীবিতকালে ও মৃত্যুর পরবর্তী কয়েক বৎসরের মধ্যে রাজারাম সম্বন্ধে যে-সকল সংবাদ পাওয়া যায় তাহাতে তিনটি স্থল ব্যতীত সৰ্ব্বত্র রাজারামের পরিচয় প্রসঙ্গক্রমে দেওয়া হইয়াছে ; অর্থাৎ রাজারামের সহিত রামমোহনের সম্বন্ধ কি—এই বিশেষ প্রশ্নের উত্তরে তাহাকে পুত্র বলা হয় নাই, শুধু রাজারাম স্বনামখ্যাত ব্যক্তি নয় বলিয়া তাহার মামোল্লেখের সময়ে পরিচয়ের সুবিধা হইবে বলিয৷ র্তাহার সহিত রামমোহনের সম্পর্কের সূত্র ধরিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে রাজারাম রামমোহনের পুত্র এই উক্তি লেখকগণ ইচ্ছা করিয়া বা বিশেষ অনুসন্ধানের ফলে করিয়াছেন বলা চলে না। সুতরাং । এই সকল উক্তিকে রাজারামের সহিত রামমোহনের সম্পর্কের বিশিষ্ট সংজ্ঞ বলা সঙ্গত হইবে না । কিন্তু এই প্রশ্নের আর একটা দিকও আছে । এক দিকে যেমন বলা যাইতে পারে যে, রাজারামের পুত্র-পরিচয় ব্যাপক অর্থে দেওয়া হইয়াছে, আর এক দিকে তেমনই বলা যাইতে পারে, ইংরেজী ভাষায় 'son’ শব্দটি দুই ব্যক্তির সহিত সম্পর্কের সংজ্ঞা হিসাবে ব্যবহৃত হইলে যখন একমাত্র ঔরসজাত পুত্রকেই বুঝায় এবং রামমোহন নিজে যখন রাজারামকে একাধিক বার ইংরেজীতে 'my son' বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন ও রামমোহনের জ্ঞাতসারে যখন রাজারাম নানা পত্রিকায় 'son’ বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন, ও রাজারাম নিজে যখন সরকারী কাগজপত্রে নিজেকে রামমোহনের ‘son' বলিয়াই পরিচয় দিয়াছেন, তখন পুত্রবাচক ‘son’ শব্দকে ব্যাপক অর্থে না গ্রহণ করিয়া বিশিষ্ট অর্থেই লওয়া সঙ্গত হইবে। ইতা ছাড়া সমাচার-দর্পণের লেখক যে রাজারামের উল্লেখ করিবার সময়ে "রামমোহনের যে পুত্র-- " এই ভাষা ব্যবহার করিয়াছেন, তাহাতে মনে হয়, তিনি রাজারামকে রাধাপ্রসাদ ও রমাপ্রসাদের পৰ্য্যায়ে ফেলিতে চাহিতেছেন । ইহাও লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, রাজারাম রামমোহনের পালিত পুত্র এই সংবাদ ‘সমাচার দর্পণে প্রকাশিত হইবার পরও এই পত্রিকায় তাহার সম্বন্ধে অন্য যে-সকল সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে তাহাতে র্তাহীকে পুত্র বলিয়াই উল্লেখ করা হইয়াছে, পালিত পুত্র বলা হয় নাই । তথাপি একথা স্বীকার করা সঙ্গত হইবে যে, এই সকল সংবাদকে রাজারাম সম্বন্ধে সিদ্ধাস্তবিশেষের সপক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ বলিয়া গ্রহণ করা সঙ্গত হইবে না, কারণ পুত্র শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, কি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, তাছা জানিবার উপায় আমাদের নাই । কিন্তু উপরে ষে তিনটি বিশেষ সাক্ষ্যের উল্লেখ করা হইয়াছে তাহদের ক্ষেত্রে এই সন্দেহের অবকাশ নাই । উহাদের একটি ১৮৩০ সনে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় প্রকাশিত “দ্বিজরাজের খেদোক্তি”-উহাতে রাজারামকে স্পষ্ট ভাষায় রামমোহনের “যবনী প্রেয়সী" গর্ভে জাত পুত্র বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। দ্বিতীয়টি, ১৮৩৫ সনে ডাঃ কাপেন্টার কর্তৃক প্রাপ্ত পত্র-উহাতে রাজারামকে পালিত পুত্র বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে ও ডিক নামক সিবিলিয়ানের হাত হইতে তিনি কি করিয়া রামমোহনের আশ্রয়ে আসেন তাহার বর্ণনা দেওয়া হইয়াছে। তৃতীয়টি, ১৮৩৬ সনে আগ্র আখবারে প্রকাশিত ও ‘সমাচার দর্পণে উদ্ধৃত