পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ডের সল্পাদকীয় সংযোজনী পৃ. ৪-৫, ৮৩–ক্যাপ্টেন জেমস ষ্টয়ার্ট অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষাদ্ধের শেষ দশকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মূলতঃ এদেশের অজ্ঞ জনসাধারণকে কুসংস্কারমুক্ত করিয়৷ খ্ৰীষ্টধৰ্ম্মেব আলোকে লইয়া যাইবার উদ্দেশ্বে শ্রীরামপুরের ব্যাপটিষ্ট মিশনরীগণ ব্যতীত কয়েক জন ইংরেজ ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করিয়াছিলেন। পাঠ্যপুস্তকাদি রচনা করিয়া এদেশের বালক-বালিকাগণকে ইউরোপীয় পদ্ধতিতে কিঞ্চিৎ শিক্ষিত করিয়া তোলা সেই উদ্দেশ্ল্যের শুভ পরিণতি বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে । এই সকল সহৃদয় ব্যক্তির জীবন ও কীৰ্ত্তির বিশদ ইতিহাস বড়-একটা পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গতঃ কেহ কেহ ইহাদের নামোল্লেখমাত্র করিয়া গিয়াছেন। মালদহের গোয়ামালটিতে জন এলার্টন, চুচুড়ায় রেভারেও রবার্ট মে, বৰ্দ্ধমানে ক্যাপ্টেন জেমস ইয়ার্ট, কালনা ও চন্দননগরে জন ডি পীয়ার্সন ও জে হালি এদেশীয়দের মধ্যে শিক্ষাপ্রচারে ব্ৰতী হইয়াছিলেন। ক্যাপ্টেন ষ্টয়ার্ট বদ্ধমানস্থিত প্রভিনশিয়াল ব্যাটেলিয়ানের অ্যাডজুটান্ট ছিলেন। তাহারই যত্নচেষ্টায় বৰ্দ্ধমান মিশন গঠিত হয়। ১৮১৯ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি সেখানে এক খণ্ড জমি ক্রয় করিয়া এক জন মিশনরীর থাকিবার উপযুক্ত বাসগৃহের ভিত্তি স্থাপন করেন। চার্চ মিশনর সোসাইটির সংশ্রবে বৰ্দ্ধমানে শিক্ষাবিস্তারের কাজ ১৮১৬ খ্ৰীষ্টাব্দে ক্যাপ্টেন ষ্টয়াটের তত্ত্বাবধানে আরম্ভ হয় ; তিনি এখানে দুইটি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন। ১৮১৮ খ্ৰীষ্টাব্দে স্কুলের সংখ্যা হয় দশ, ছাত্র-সংখ্যা এক হাজার। স্কুলসমূহের মাসিক ব্যয় ছিল ২৪০ টাকা। কাৰ্য্যারম্ভের সময় ইয়ার্টকে বহুবিধ বাধার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল ; বিরুদ্ধবাদীরা রটাইয়া দিয়াছিল, যে এদেশের শিশুদিগকে জাহাজে পুরিয়া বিলাতে চালান দেওয়ার মতলবেই সাহেব স্কুল ফাদিয়া বসিয়াছেন । কোন পুস্তকে যীশুখ্রীষ্টের নামোল্লেখেই তখন যথেষ্ট বাধার উদ্ভব হইত। বৰ্দ্ধমানে তখন পাঁচটি শাস্ত্রাঙ্গুমোদিত বিদ্যালয় ছিল—মিশনরী স্কুলের প্রভাবে পাছে তাহদের বিদ্যালয়গুলি ভাঙিয়া যায় এই ভয়ে শিক্ষকেরা সৰ্ব্বদা সন্ত্রস্ত থাকিত। ক্যাপ্টেন ইয়ার্টের স্কুলে কেহ ছেলে পাঠাইলে ইহারা তাহার উপর অভিশাপ বর্ষণ করত। ক্যাপ্টেন ইয়াট যেখানে যেখানে স্কুল স্থাপনা করিতেন সেখান হইতেই বাছিয়া বাছিয়া উপযুক্ত কৰ্ম্মঠ শিক্ষক নিযুক্ত করিতেন—তাহাতে বিরুদ্ধবাদীদের কথায় লোকের ক্রমশঃ অবিশ্বাস জন্মাইতে থাকে এবং শীঘ্রই

  • তারাটা দত্ত বর্ধমানে ক্যাপ্টেন ইয়ার্টের স্কুলের এক জন শিক্ষক ছিলেন। তিনি মনোরঞ্জনেতিহাস“বালকেরদিগের জ্ঞানদায়ক ও নীতিশিক্ষক উপাখ্যাৰ”--রচনা করেন। ‘মনোরঞ্জনেতিহাস’ পুস্তকের বাংলা, এবং ইংরেজী-বাংলা—দুইটি সংস্করণই ১৮১৯ সনে প্রথম প্রকাশিত হয়। -