পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৩৯

চাহি মোর মুখে, ওগো রহস্যমধুরা!
কী বলিতে চাহ মোরে প্রণয়বিধুরা
সীমন্তিনী মোর! কী কথা বুঝাতে চাও!
কিছু ব’লে কাজ নাই— শুধু ঢেকে দাও
আমার সর্বাঙ্গমন তোমার অঞ্চলে,
সম্পূর্ণ হরণ করি লহো গো সবলে
আমার আমারে। নগ্ন বক্ষে বক্ষ দিয়া
অন্তররহস্য তব শুনে নিই প্রিয়া।
তোমার হৃদয়কম্প অঙ্গুলির মতো
আমার হৃদয়তন্ত্রী করিবে প্রহত;
সংগীততরঙ্গধ্বনি উঠিবে গুঞ্জরি
সমস্ত জীবন ব্যাপি থরথর করি।
নাইবা বুঝিনু কিছু, নাইবা বলিনু,
নাইবা গাঁথিনু গান, নাইবা চলিনু
ছন্দোবদ্ধ পথে সলজ্জ হৃদয়খানি
টানিয়া বাহিরে! শুধু ভুলে গিয়ে বাণী
কাঁপিব সংগীতভরে; নক্ষত্রের প্রায়
শিহরি জ্বলিব শুধু কম্পিত শিখায়;
শুধু তরঙ্গের মতো ভাঙিয়া পড়িব
তোমার তরঙ্গ-পানে; বাঁচিব মরিব
শুধু, আর কিছু করিব না। দাও সেই
প্রকাণ্ড প্রবাহ, যাহে এক মুহূর্তেই
জীবন করিয়া পূর্ণ, কথা না বলিয়া,
উন্মত্ত হইয়া যাই উদ্দাম চলিয়া।

মানসীরূপিণী ওগো, বাসনাবাসিনী,
আলোকবসনা ওগো, নীরবভাষিণী,
পরজন্মে তুমি কি গো মূর্তিমতী হয়ে