পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8W সবুজ পত্র বৈশাখ, ১৩২৫ পরামর্শ চেয়েছে। আমি বলি, যে লেখার রূপ নেই তা তুমি পড়ােনা, হােক না সে লেখা ওজনে ভারি। তুমি যদি রচনার রূপ উপভােগ করতে শেখাে, তাহলেই তুমি মনোজগতে মুক্তপুরুষ হয়ে যাবে। চণ্ডীদাস বলেছেন- “জকিণীরূপ কিশােরী স্বরূপ কামগন্ধ নাহি তায়” তাঁর কথা অবলম্বন করে আমি বলছি যে, যে রূপের ভিতর কামগন্ধ নেই, সে রূপের সন্ধান শুধু আর্টে পাওয়া যায়। অবশ্য এ স্থলে “কাম” শব্দ তার কোনও সঙ্কীর্ণ অর্থে বুঝলে চলবে না। যে রূপ মানুষের কামনার বহিভূত, সেই রূপ যে চিনতে শিখেছে, একমাত্র সে-ই রসের স্বরূপের সাক্ষাৎ পায়। বলা বাহুল্য একই লেখা এক- জনের কাছে কামগন্ধে ভুরভুর করতে পারে, কিন্তু আর একজনের কাছে তার ভিতর কামের নামগন্ধও না থাকতে পারে। সেটা নির্ভর করে কার মন কে আছে তার উপর-কামলােকে না রূপলােকে ? কিন্তু যুদ্ধের অবস্থা যে রকম সঙ্গীন হয়ে দাড়াচ্ছে তাতে করে কি লিখব কি পড়ব তার চেয়ে ঢের বেশী ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যে, দেশে আর লেখাপড়া করা চলবে কিনা? এ কথা আমরা সকলেই জানি যে, দেশে যখন মহামারি দেখা দেয়, তখন লােকে পুলো সরস্বতীর করে না, করে রক্ষাকালীর; অর্থাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবার মানুষে সহজ উপায় বার করেছে—মৃত্যুরই উপাসনা করা। আত্মরক্ষার এ প্রচেষ্টা নিরর্থক বলে কোনও লাভ নেই, কেননা, এ চেষ্টার মুলে যা আছে তা হচ্ছে মানুষের প্রতিষ্ঠিত প্রজ্ঞা নয়,-বিচলিত হৃদয়।