পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পূর্বদিকে সাদা করােটি রঙের আলাে
পিছনে নামছে সন্ধ্যার মতাে ঘাের
পৃথিবীর শেষ শ্মশানের মাঝখানে
বসে আছি শুধু দুই মৃতদেহ চোর’

 পাঠকের দুর্ভাগ্য, জয় এখন সর্বার্থসাধক সাহিত্যিক হওয়ার জন্যে পণ্যায়নের বিধিবিধান মেনে নিয়েছেন।

 বস্তুত ঠগ বাছতে গেলে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। ভারতীয় উপমহাদেশ যখন তার সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক পিছুটান ও আধা-ঔপনিবেশিক প্রাপ্তির লােভ নিয়ে পুঁজিবাদী রূপান্তরের গন্তব্যহীন যাত্রায় প্ররােচিত হচ্ছে—বাঙালি লিখিয়েদের কাছে অপ্রতিরােধ্য হয়ে উঠেছে প্রতাপের স্নেহধন্য হওয়ার বাসনা। ‘পাখিতীর্থদিনে’ সংকলনে গ্রথিত ‘মানুষ’ কবিতায় মাসুদ এই বাস্তবের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন এভাবে:

‘প্রভুর সর্বশেষ মুখভঙ্গি
নিরিবিলি উঞ্ছজীবিকার স্মৃতি।
খুব ম্রিয়মান হয়ে ধরা দেয় প্রভুর দূরনিয়ন্ত্রণী সংকেত
এখন এতােটা দূরেও প্রাক্তন।’

 স্বাধীন অস্তিত্ববিহীন মানুষ কবির কাছে প্রতিভাত হয় প্রাণিশূন্য নদীচরে নির্বাসিত একটি বেড়াল। কালাে ও নিঃসঙ্গ’ হিসেবে। দূরনিয়ন্ত্রণী সংকেতে তার যাবতীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নির্ধারিত হচ্ছে। সুতরাং আজকের লেখা এই নয়া-ঔপনিবেশিক বিপন্নতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায় গ্রহণ না করে পারে না। রণজিৎ দাশ, মৃদুল দাশগুপ্তের লেখা এই দায়িত্ব বহন করে বলে সাহিত্যিক অভ্যাস ও আকরণকে সার্থক প্রতিস্পর্ধা জানাতে পারছে। পাঠকের কাছে পৌছে দিচ্ছে অজেয় চেতনা ও বিকল্প গ্রন্থনার সংকেত। মাসুদ খানের ‘টানেল’ কবিতায়ও তেমনি সংকেত পাই যা কিনা লেখার গৌরব সম্পর্কে নতুন ভাবে আমাদের অবহিত করে তােলে:

‘টানেল যে হল বিকল্প মৃত্যুর
হারানাে মানুষ টানেল লুকিয়ে ফেলে;
ঈশ্বর নেবে গণিতের আশ্রয়
সবাই ফিরেছে, ফেরেনি একটি ছেলে।

টানেল জানে না এসব কাহিনী হাবা
বােঝে না যে গতি, রক্তের চলাচল
শুনছাে টানেল, ভূতলপৃষ্ঠে জাগে
লুপ্ত মানুষ খুঁজবার কোলাহল।

মৃত্যুতে নয়, টানেলে ঢুকবে এক
স্মরণকালের বিব্রত মৌমাছি

১১৪