পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অন্তঃসার। বরাক উপত্যকার বাংলা লেখালেখিও অন্যান্য অপর পরিসরের সহযাত্রী লিখন-যোদ্ধাদের জীবনশস্যের মতো সমগ্র বাংলা সাহিত্যের গৌরব ভাণ্ডারকে অনবরত ঋদ্ধতর করে চলেছে। বিজিৎ-এর বয়ানের প্রতিধ্বনি করে লিখতে চাই: ‘আসলে সাহিত্য প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন এবং এই ব্যবস্থার উচ্ছেদ সঠিকভাবে করতে পারলে একটি পেশাদার পত্রিকা কিংবা একটি বিশেষ প্রকাশনা সংস্থার মৃত্যু যদি বা ঘটানো যায় সেখানে আরো দশটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তবুও থেকে যাবে। সুতরাং মূল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটাকেই চিনতে হবে, চেনাতে হবে।...বর্তমানের সুরক্ষিত বন্দিশালা ভেঙে গুড়িয়ে বাংলা সাহিত্যকে স্বাধীন এবং সাহসী করার দায় সেইসব অগ্রসর লেখকদের হাতে যারা একান্তভাবেই লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বহু সৎ লিটিল ম্যাগাজিনের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের জগতে একটা চোরাস্রোতের মতো কাজ চলছে—এখন প্রয়োজন সেই স্নোতকে প্রবলতর করা।’

 হ্যাঁ, নিশ্চয়। স্বাধীন’ এবং ‘সাহসী’ সেইসব লিখিয়েরা রয়েছেন অপর পরিসরেই, বিশেষত বরাক উপত্যকার মতো প্রান্তিকায়িত নির্বাসিত বাংলায়, যাদের কাছে আজ ‘বাংলা অভিধাই পরকীয়া হয়ে গেছে। তবে ‘চোরাস্রোত’ নয়; কেননা গত ছাব্বিশ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক পণ্য সাহিত্য গজভুক্ত কপিখবৎ খোসামাত্রসারে রূপান্তরিত হয়েছে। ইতিহাসের দান যারা উল্টে দিয়েছে, অপর পরিসরের সেইসব লিখনযোদ্ধাদের এখন নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আর দেরি নয়। এখনই শুরু হোক বাংলা সাহিত্যের বিকল্প ইতিহাস রচনার কাজ। তথাকথিত পরিধির পাঠকৃতি ছদ্ম-কেন্দ্রের ভ্রমপাঠের কালো মুকুট খসিয়ে দিক। বরাক উপত্যকার পদাতিকেরা সাংস্কৃতিক রাজনীতির ধূর্ত কৌশলকে নানাভাবে চিনেছেন। এবার সংকোচের বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে ওই চেতনার বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিন তারা। ভাঙন পিছনে থাক, সম্মুখে নির্মাণ। তাই, আসন্ন ওই শুশ্রুষার বার্তা।

৬৯