পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
২৪

নৌকার খোঁজে বাহির হইলে এখানে ওখানে তামাক কি দু’এক কল্কি জুটিবে না? আলতামণি এখনও কানাইকে সমানে বাতাস করিয়া চলিয়াছে। হঠাৎ পাখা বন্ধ করিয়া ভাঙ্গা গলায় সে বলিয়া উঠিল, ‘একবারটি দ্যাকো দিকি মামা ভাল করে তাকিয়ে?’

 মহিম ও ভৈরব তাকাইয়া দেখিল। দু’জনের মুখ পাংশু হইয়া গেল। ‘এমন ধারা মুখ হল কেন মামা? শ্বাস পড়ছে না কেন মামা?’ কানাই-এর মুখ দেখিলেই সেটা বোঝা যায়। কতক্ষণ তার শ্বাস পড়িতেছে না, তাও অনেকটা অনুমান করা যায়।

 ভৈরব ও মহিম পরস্পরের মুখের দিকে চাহিল। কাল অত হাঙ্গামা করিয়া মই বাহিয়া তারা কি তবে একটা শবকে মাচানে তুলিয়াছে? ভৈরব গুরুজন হইয়া কি শাপমণ্যি করিয়াছে একটা মৃত মানুষকে?

 তাই সম্ভব। মাচান হইতে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া কানাইকে আলতামণি বন্যার জলে ভাসিয়া যাইতে দেয় নাই, এক হাতে আমগাছের ডালটা আঁকড়াইয়া ধরিয়া অন্য হাতে কানাইকে ধরিয়া রাখিয়াছিল, আর তীব্র মর্ম্মভেদী আর্ত্তনাদ আরম্ভ করিয়াছিল। তবু বন্যার স্রোত তখন কানাইকে ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছে। এ বন্যা, আর কিছু নয়। বন্যা মানুষকে রেহাই দেয় না। সাবিত্রী আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিলে পর্য্যন্ত বন্যা সাবিত্রীর স্বামীকে ছিনাইয়া লইয়া যাইতে পারে, সাবিত্রী বিধবা হইয়া যায়।