কথা বলে আর হাউ হাউ করে কাঁদে। সে কান্না দেখলে পাষাণেরও বুক ফেটে যায়। কালীর দিব্যি।
নগেন বলল, দুটাকা মাইনে বাড়িয়ে না দিলে ত ওকে বাঁচানো চলে না ভাই। ভয়ে মরি, দুঃখের জ্বালায় কবে সত্যি সত্যি বিষ খেয়ে ফ্যালে। তুমি যদি মাকে বলে ওর দুটাকা মাইনে বাড়িয়ে দিতে পার তবেই সর্ব্বরক্ষে হয়। নইলে রোজ ওর বুকফাটা কান্না আর সয় না। নগেন মাথা নাড়তে লাগল।
আমি তৎক্ষণাৎ স্বীকার করলাম মাকে বলব। কৃতজ্ঞতায় অভিভূত হ’য়ে নগেন আচমকা আমায় সশব্দে চুম্বন ক’রে ফেলল। আমি আঁৎকে উঠে ছিটকে স’রে গেলাম। নগেন হাত জোড় করে বলল, চটোনা দাদা। তোমায় বড় ভালবাসি কিনা, তাই সামলাতে পারলাম না।
যুক্তকর মুক্ত ক’রে সে ফের মুখখানা করুণ করল, কি ভাবছি জান দাদা? ভাবছি দুটাকায় কি তোমার দিদির কান্না ঘুচবে! অভাবের সমুদ্রে দুটাকা দুফোঁটা শিশির বইত নয়। তুমি বরং পাঁচটা টাকার কথাই বোলো। কেমন? তোমরা হলে রাজামানুষ, পাঁচটা টাকা তোমাদের কাছে পাঁচটা পয়সা। এ্যাঁ?
আমি স্বীকার করলাম। নগেন বলল, ওকে বলোনা কিন্তু। ওর বড় লজ্জা কিনা, কেঁদে কেঁটে অসুখ ক’রে ফেলবে। হয় ত লজ্জায় বিষও খেয়ে ফেলবে। জান, ওর কাছে আধ ভরি আফিং আছে।
তারপর একসময় মমতাদি বলল, চল খোকা, আমরা যাই।
নগেন সুধাল, তুমি কোথা যাবে শুনি?
দুবেলা যেখানে রাঁধতে যাই সেখানে, আবার কোথা?