সে শুয়ে ছিল, পাশে একটা কাঁথা জড়ানো পুঁটলি। পুঁটলিটা চোখ বন্ধ ক’রে ঘুমোচ্ছে, আর মাঝে মাঝে কল্পিত স্তন চুষছে।
লুব্ধ হয়ে বললাম, কোলে নেব দিদি?
কাশিতে তার গলা ভেঙ্গে গিয়েছিল, বিশ্রী শব্দ ক’রে বলল, আজ নয় ভাই। ওটা আজ অস্পৃশ্য, ছুঁলে নাইতে হবে। আঁতুড় উঠুক তখন কোলে নিও। সোমবারের পরে একদিন এসো, কেমন?
বৃহস্পতিবার গেলাম, কিন্তু ছেলেটাকে কোলে নিতে ঘেন্না হল। আঁতুড় ঘরটা অদৃশ্য হয়েছিল, রোয়াকে কাঁথায় শিশু শুয়ে ছিল। রোগা কালো, পেটটা টিম্টিমে, গলায় লাল লাল ঘা। প্রথম দিন শুধু ফুলের মত মুখখানা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, আজ সম্পূর্ণ অবয়ব দেখে দারুণ বিতৃষ্ণা হল।
সে বলল, নেবে কোলে?
আমি বিপদে প’ড়ে অনিচ্ছার সঙ্গে বললাম, দাও। ওর গলায় কি হয়েছে দিদি?
শিশুর মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে সে বলল, কুষ্ঠ।
আমি চমকে বললাম, কুষ্ঠ?
সে চোখ তুলে তাকাল। দুচোখে একটা অস্বাভাবিক জ্যোতি।
না ভাই, কুষ্ঠ নয়। গরম তেলে পুড়ে গেছে। কিন্তু ওকে তোমার কোলে নিয়ে কাজ নেই। ওর শরীরে অনেক ফোস্কা, লাগবে।
কে গরম তেল ফেলে দিয়েছে দিদি?
সে নীরবে চোখ মুছল, জবাব দিল না। আমি চুপ ক’রে দাঁড়িয়ে রইলাম। মমতাদি রোগা হয়ে গেছে, চোখের নীচে গভীর কালো দাগ, চোখ দিয়ে যেন দুঃখের কালি গড়িয়ে প’ড়ে শুকিয়েছে।