পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
৪২

 আরও তিন মাস কাটল। সে মা হবার ধাক্কা সামলে প্রায় আগের মত সুস্থ ও সবল হয়ে উঠল, কিন্তু কাজ করতে এল না। একদিন স্কুল যাবার পথে মমতাদির ওখানে গেলাম।

 নগেন আপিসে যাবার জন্ম প্রস্তুত হয়ে রোয়াকে টুলে বসে পান চিবোচ্ছিল, আর গর্জ্জন ক’রে কি সব বলছিল। ছোট ছেলেকে স্নান করিয়ে কাজল পরাতে পরাতে মমতাদি নির্ব্বিকার চিত্তে শুনে যাচ্ছিল।

 উঠানে উপুড় হয়ে শুয়ে হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে প্রাণপণে চেঁচাচ্ছিল মমতাদির বড় ছেলে পাঁচু।

 আমায় দেখে নগেন গর্জ্জন বন্ধ ক’রে সাদরে অভ্যর্থনা করল। নিজে মমতাদির পিঁড়িটা একটানে কেড়ে নিযে ব’সে আমায় টুলে বসাল। বলল যে, আমার জন্য তার নাকি বড়ই মন কেমন করছিল। মমতাদি শুধু একটু হেসেই আমায় স্বাগত জানাল।

 আমি জিজ্ঞাসা করলাম, পাঁচু কাঁদচে কেন?

 নগেন বলল, ও শূয়ারকা বাচ্চার কথা বোলোনা ভাই। হারামজাদা দু’একবছরের মধ্যে জেলে ঢুকবে। এই বয়সে এমন পাকা চোর হয়ে উঠেছে যে, বললে তুমি বিশ্বাস করবে না। চুপ করলি পাষণ্ড ইষ্টুপিড নারকী? চুরি ক’রে মার খেয়ে কাঁদিস, তোর লজ্জা নেই?

 আমি পাঁচুর দিকে চেয়ে দেখলাম, চোরের সাজাই হয়েছে বটে। পিঠময় অসংখ্য শাস্তির চিহ্ন, পাশে পড়ে আছে একটা ভাঙ্গা বাখারি। নিজের চোখকানকে আমার বিশ্বাস হল না। মমতাদির ছেলে চোর!

 বললাম, কি চুরি করেছে?

 নগেন বলল, পয়সা। খাবার নয়, খেলনা নয়, পয়সা। তাও কি আমাদের পয়সা? ওই ওদের—ব’লে আঙ্গুল দিয়ে দোতালাটা দেখিয়ে