পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩
মমতাদি

দিল। বালিশের তলা হাতড়ে পাঁচসিকে চুরি করে পালাচ্ছিল, যাদব বাবু দেখতে পেয়ে চোর ছেলে ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন—সঙ্গে যাচ্ছেতাই গালাগালি।

 আমি চকিতে মমতাদির দিকে তাকালাম। সে মাথাটা এত নীচু করে ছিল যে মুখ দেখতে পেলাম না। শুধু চোখ পড়ল, তার কাগজের মত সাদা কপাল, আর খোকার চোখে কাজল দিতে আঙ্গুলের থর থর কম্পন। দেহ তার নিস্পন্দ, নতমুখী মর্ম্মর মূর্ত্তির মত।

 যা, দূর হয়ে যা সামনে থেকে কুলাঙ্গার!

 নগেনের গর্জ্জন শুনে চমকে ফিরে চেয়ে দেখলাম, পাঁচু কখন উঠে দাঁড়িয়েছিল, এখন গুটি গুটি বাইরের দিকে চলেছে। তার সেই ধীর চলন দেখে নগেনের বোধ হয় ধৈর্য্যচ্যুতি হল, হাতের কাছে খড়ম ছিল একপাটি তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মাবল। খড়মটা পাঁচুর গায়ে লাগল না, ওদিকের দেয়ালে ঠেকে বৌলা ভেঙ্গে পাঁচুর পায়ের কাছে ছিটকে এল। পাঁচু দাঁড়াল। খড়মটা তুলে নিয়ে জিভ বার ক’রে ভেংচি কাটল। তারপর বাপের মাথা লক্ষ্য ক’রে ছুঁড়ে দিয়েই চকিতে অদৃশ্য হয়ে গেল। পিতাপুত্র দুজনেই লক্ষ্যভেদে বিশেষ অপটু দেখলাম। খড়মটা নগেনের মাথায় না লেগে শোবার ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে চলে গেল।

 নগেন তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। কিন্তু উটের মত লম্বা পা থাকা সত্ত্বেও তখনকার মত অদৃশ্য পলাতককে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই জেনে ফিরে এসে পিঁড়িতে বসে পকেট থেকে বিড়ি বার ক’রে ধরাল। একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে ক্রোধ-বিকৃত মুখে এমন একটা উদাসীন ভাব এনে ফেলল যে, আমি অবাক হয়ে গেলাম। বিড়ির ধোঁয়া যে রাগের এমন ভাল ওষুধ তা জানা ছিল না।