পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ከ9”e সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা। " বৈশাখ। ভাবের ছায়াপাত হইয়াছে। তিনি বিদেশীয় কাব্যের অনুকরণে বীরাঙ্গণা কাব্য লিখিয়াছেন ; কিন্তু চিরপ্রসিদ্ধ পৌরাণিক কথার প্রতি দৃষ্টি না রাখাতে এ কাব্যও বিজাতীয়ভাব শূন্য হয় নাই। মধুসুদন যদি স্বকীয় পাশ্চাত্যভাবাপন্ন প্রকৃতির সংযম করিয়া চলিতে শিখিতেন, তাহা হইলে বোধ হয়, তদীয় রচনায় বিজাতীয় ভাবের সংস্পৰ্শ ঘটিত না । সমালোচক মহোদয়গণ মধুসূদনের রচনাগত অনেকগুলি দোষের উল্লেখ করিয়া থাকেন। এই সকল দোষের মধ্যে ‘বাক্যের জটিলতা, প্ৰাঞ্জলতার অভাব, উৎকট শব্দের সন্নিবেশ, অনুপযোগী উপমাসমূহের সমাবেশ, প্ৰথাবহির্ভূত ক্রিয়াপদের ব্যবহার প্রভৃতি প্ৰধান। কিন্তু মধুসূদনের অসামান্য প্ৰতিভা এবং কল্পনার অপূর্ব চাতুরী তাহার রচনার সমস্ত দোষের মধ্যেও তঁহাকে এক জন প্ৰধান কবি বলিয়া পরিচিত করিয়াছে। মধুসুদন স্বকীয় রচনার সকল স্থলে ভারতচন্দ্রের ন্যায় স্বভাবসিদ্ধ কোমল ও শ্রুতিমধুর শব্দের বিন্যাস করেন নাই। কিন্তু তিনি যে, শ্রুতিমধুর শব্দবিন্যাসে অসমর্থ ছিলেন, তদীয় ব্ৰজাঙ্গনা ও ক্ষুদ্র কবিতাবলী পাঠ করিলে, তাহ প্ৰতীত হয় না। অমিত্ৰচ্ছন্দেও যে, প্রাঞ্জলতা ও মাধুৰ্য রক্ষা করিতে পারা যায়, তাহা তিনি “বীরাঙ্গণায়”। দেখাইয়াছেন। কিন্তু পূৰ্ববৰ্ত্তী কাব্যে তিনি অপ্ৰসিদ্ধ ও উৎকট শব্দের সন্নিবেশের ইচ্ছা সংযত রাখিতে পারেন নাই। র্তাহার ব্ৰজাঙ্গনায় ললিত পদাবলীর মাধুৰ্য্য আছে। রাধিকার পূর্বারাগ, বিরহ প্ৰভৃতি সুকৌশলে বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু ব্ৰজাঙ্গনাকার বৈষ্ণব কবিদিগের পার্শ্বে স্থান গ্ৰহণ করিতে পারেন নাই। বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস প্রভৃতি মাধুৰ্য্যের যে অক্ষান্ম ভাণ্ডার রাখিয়া গিয়াছেন, তাহার সহিত মধুসূদনের মধুপ্রবাহের তুলনা হয় না। মধুসুদন শব্দযোজনার চমৎকারিত্বে যেমন ভারতচন্দ্রের নিম্ন স্থানে অবস্থিত, স্বভাববর্ণনে ও জাতীয় ভাবের রক্ষণে সেইরূপ মুকুন্দরামের নিম্নগণ্য। কিন্তু কল্পনার লীলায় এবং গভীর ভাবের বর্ণনায় তিনি বঙ্গের এই দুই জন শ্রেষ্ঠ কবিকে অতিক্ৰম করিয়াছেন। কবি প্ৰবর শ্ৰীযুক্ত হেমচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় মধুসূদনের মেঘনাদবধাসম্বন্ধে লিখিয়াছেন,-“যে গ্রন্থে স্বৰ্গ, মৰ্ত্ত্য, পাতাল, ত্ৰিভুবনের রমণীয় এবং ভয়াবহ প্ৰাণী ও পদার্থসমূহ সম্মিলিত করিয়া পাঠকের দর্শনেন্দ্ৰিয়লক্ষ্য চিত্রফলকের ন্যায় চিত্রিত হইয়াছে,-যে গ্ৰন্থপাঠ করিতে করিতে ভূতকাল বৰ্ত্তমান এবং অদৃশ্য বিদ্যমানের ন্যায় জ্ঞান হয়,-যাহাতে দেব, দানব, মানবমণ্ডলীর বীৰ্য্যশালী, প্ৰতাপশালী, সৌন্দৰ্য্যশালী জীবগণের অদ্ভুত কাৰ্যকলাপ দর্শনে মোহিত এবং রোমাঞ্চিত হইতে হয়,-যে গ্ৰন্থ পাঠ করিতে করিতে কখন বা বিস্ময়, কখন বা ক্ৰোধ এবং কখন বা করুণরসে আর্দ্র হইতে হয়, এবং বাষ্পাকুলিলোচনে যে গ্রন্থের পাঠ সমাপ্ত করিতে হয়, তাহা যে বঙ্গবাসীরা চিরকাল বক্ষঃস্থলে ধারণ করিবেন, ইহার दिखिडा कि ?

  • * * * বিদ্যাসুন্দর এবং অন্নদামঙ্গল ভারতচন্দ্ররচিত সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট কাব্য ; কিন্তু যাহাতে অন্তৰ্দাহ হয়, হৃৎকম্প হয়, শরীর রোমাঞ্চিত হয়, বাহেন্দ্ৰিয় স্তব্ধ হয়, তাদৃশ ভাব