পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (ত্রয়োদশ ভাগ).pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

See সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা [ ৩য় সংখ্যা । হস্তে উহা অর্পণপূর্বক পরস্পর আদানপ্রদান ক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই প্ৰথা অপর দুইশ্রেণীর পুণ্ডরিকগণের মধ্যে প্ৰচলিত নাই । ইহারা বলে যে, পাবনাজেলায় যে পুণ্ডরিক জাতি আছে, তাহাদের সহিত আমাদের পংক্তিভোজন নিষেধ নাই ; কিন্তু সামাজিকভাবে আহারাদি হয় না । কেন না। আমরা রাজসন্মানিত, অর্থাৎ রাজা সীতারাম রায়ের সম্পর্কিত বলিয়া আমরাই শ্ৰেষ্ঠ । তবে “বিদ্যাধরের অধস্তন পুরুষগণ আমাদের জাতির মধ্যে সর্বপ্রধান ।” আমরা মধ্যমপক্ষীয় হইলেও রাজসম্মানে শ্রেষ্ঠত্ব পাইয়াছি। আমাদের শ্রেণীর বড় বড় গৃহস্থই কলিকাতার দক্ষিণে ডায়মণ্ডহাড়বার মহকুমায় অবস্থান করিতেছেন। তাহারা সকলেই চাকুরিব্যবসায়ী। এই পুণ্ডরিক গৃহস্থ্যগণ অতি পুরাতনকাল হইতে আমাদের জাতীয় ব্যবসা পরিত্যাগ করিয়া চাকুরি এবং অন্যবিধ ব্যবসা অবলম্বন করিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই জমিদারের গোমস্তা, মুহুরী, মুন্সী ইত্যাদি কাৰ্য্য করেন। বৰ্দ্ধমানকালে ইংরাজীতে কৃতবিদ্য হইয়া আবার অনেকে গবৰ্ণমেণ্টের আফিসে এবং কেহ কেহ সওদাগরি আফিসে কাৰ্য্য করিতেছেন। ইহাদের উপাধিতে পুণ্ডরিক বলিয়া আন্দেী চিনা যায় না। বিশ্বাস, সরকার, প্রামাণিক, শিকদার, ভূয়ে প্রভৃতি নবাবী উপাধি এবং কার্বাল, নাঙ্গলে, দাম, মাহম, প্ৰকাইট প্ৰভৃতি সামাজিক উপাধিতে ইহারা সাধারণে পরিচিত । এই দক্ষিণবঙ্গের পুণ্ডরিক-সমাজে, ৫।৬ হাজার টাকা দিতে না পারে এমন গৃহস্থ একঘরও নাই। ইহাদের যে প্ৰামাণিকে ক্ষৌরকাৰ্য্য করে, তাহারা এই অঞ্চলে অন্যান্য নরসুন্দরকুল হইতে অতিশ্ৰেষ্ঠ, ইহাদের সাধারণ নাম “দাসপ্ৰামাণিক” । অপর আর এক শ্রেণীর ক্ষৌরকার এই অঞ্চলে আছে, তাহদের সাধারণ নাম “মাল্লা প্ৰামাণিক” । এই দুই শ্রেণীর ক্ষৌরকারগণের সঙ্গে পুণ্ডরিক-সমাজের একটী পুরাতন গল্প আছে। কোন এক সময় কলিকাতা ভবানীপুরের হরপ্ৰসাদ রায় জমিদার মহাশয়ের পূর্বপুরুষ সাধক প্রবর কেশবচন্দ্র রায় তাহার জমিদারী মৃভূগাছ পরগণার অন্তর্গত ডায়মণ্ডহারবার মহকুমার নিকটস্থ “বানচেওড়া” গ্রামে “কেশৰেশ্বর শিব” প্ৰতিষ্ঠা করিতে গিয়া পুণ্ডরিক-প্ৰজাগণের সাহায্য গ্ৰহণ করেন। তাহারা অশৌচাবস্থায় দেবীকাৰ্য্য করিতে অসন্মত হওয়ায় জমিদার কেশবচন্দ্ৰ ক্ষৌরকারগণের দ্বারা তাহাদিগকে শৌচমুক্ত করিতে আদেশ দেন। প্ৰামাণিকগণ পুণ্ডরিকের ক্ষৌরকাৰ্য্য করিলে অপর উচ্চবর্ণের কাৰ্য্য করিতে পরিবে না বলিয়া অস্বীকার করে, তাহাতে জমিদার মহাশয় সেই সময় পুণ্ডরিকগণের ক্ষেীরা কাৰ্য্যকারী নাপিতগণকে “দাস” উপাধি দিয়া নিজে তাহার দ্বারা ক্ষেীরা কাৰ্য্য সম্পন্ন করাইয়াছিলেন। এই হইতে যাহারা পুণ্ডরিকগণের কাৰ্য্য করে, তাহারা দাসপ্রামাণিক হয় এবং উচ্চবর্ণের হিন্দুরাও কাৰ্য্য করে। আর অসম্মত নরসুন্দর মাল্লা অর্থাৎ “মানটান৷” বলিয়া পতিত হয়। অধুনা এই কাৰ্য্য হইতে উচ্চ বর্ণের হিন্দুর প্রামাণিকে পুণ্ডরিকগণের কাৰ্য্য করিয়া আসিতেছে। কেশবচন্দ্ৰ হইতে পুড়োসমাজের আরও একটা উন্নতি হয়। পুণ্ডরিকগণ পরম জাগ্ৰতবিগ্ৰহ কেশবেশ্বর শিবের পরিচারক হইয়। অপর নিম্নবর্ণের श्लूि श्रेड অনেক পরিমাণে সাধারণ হিন্দুসমাজে প্রাধান্য পাইয়াছে।