পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অর্থপিপাসার মূল।

লিকা বেষ্টিত সূত্রভাষ্যের পদানুসরণ করিয়া লোকালয় অপেক্ষা বনচর সেবিত অরণ্য জীবনকেই শ্রেয়ঃকল্প বলিয়া প্রচার করিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের চক্ষেও হয় ত অর্থই সকল অনর্থের মূল! কিন্তু মাটির দেহ লইয়া, মাটির পৃথিবীতে বাস করিয়া, জীবন-সংগ্রামের সহস্র সংঘর্ষে বায়ু-তাড়িত ধূলিপটলের ন্যায় দেশ হইতে দেশান্তরে ছুটিয়া, পুত্রকন্যার ক্ষুধার অন্নমুষ্টির জন্য যাহায় ললাটের মেদবিন্দু ক্ষরণ করিয়া, সংসার- সেবায় পলে পলে হৃদয়শোণিত ঢালিয়া দিতেছে, তাহারা, দার্শনিক- তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বুঝিতে পারে না; অর্থই তাহাদের পরম পরমার্থ। জীবনধারণের জন্য, প্রতিদিনের অভাব মোচনের জন্য, আত্মরক্ষার জন্য, আত্মাধিকারসংস্থাপন করিবার জন্য, এ সংসারে প্রতি পদে অর্থের সর্বদাই আবশ্যক। সেই জন্য সংসারের নরনারীর জীবন সমালোচনা করিতে হইলে, দার্শনিক ব্যাখ্যা দুরে রাখিয়া, সংসার- বিজ্ঞানের প্রতিদিবসের অভিজ্ঞতা লইয়াই তত্ববিচার করিতে হইবে।

 মাটির পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া, ক্ষণভঙ্গুর মাটির সিংহাসনের জন্য সিরাজদ্দৌলা এত লালায়িত কেন? দুই দিন পরেই যে জল- বিম্ব গভীর অতলস্পর্শ জীবনসমুদ্রের অনন্ত জলরাশিতে মিশিয়া যাইবে। যে রাজ্য, যে রাজসিংহাসন, যে চতুরঙ্গসেনাসেবিত রণপতাকা দুই দিন পরেই পরের হাতের ক্রীড়াকন্দুকে পর্য্যবসিত হইবে, তাহার জন্য সিরাজদ্দৌলার এত মস্তিষ্ক-কণ্ডূয়ন কেন? যাঁহারা এরূপভাবে সিরাজদ্দৌলার জীবন-সমালোচনা করিবেন, তাহাদের হাতে সিরাজদ্দৌলার পরিত্রাণলাভের কিছুমাত্র সম্ভাবনা নাই। কিন্তু যাঁহারা সংসার-তত্ত্ব বিচার করিয়া, পৃথিবীর অন্যান্য স্বাধীন ভূপতিদিগের কার্যাকার্যেয় তুলাদণ্ড লইয়া, সিরাজদ্দৌলার কৃতাপরাধের পরিমাপ করিতে অগ্রসর