সিরাজদ্দৌলা দেখিয়াছিলেন যে,কলিকাতার ইংরাজ দরবারই ইংরাজদিগের হর্ত্তা কর্ত্তা বিধাতা; কাশিমবাজারের কুঠিয়ালগণ নগণ্য রাজকর্ম্মচারিমাত্র,—সর্ব্বাংশে কলিকাতার মুখাপেক্ষী। সুতরাং কাশিমবাজারের ইংরাজ গোমস্তা যেরূপভাবে মুচলিকাপত্র স্বাক্ষর করিলেন, কলিকাতার ইংরাজ-দরবার তাহা স্বীকার না করা পর্য্যন্ত নিশ্চিন্ত হইহইবার উপায় নাই। অগত্যা কলিকাতার ইংরাজ-দরবারকে শাসনকৌশলে বশীভূত করিবার জন্যই ওয়াট্স্ ও চেম্বার্স্কে মুর্শিদাবাদে অবরুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। ওয়াট্স্ এবং চেম্বার্স্ একপক্ষ মুর্শিদাবাদে অবস্থান করিলেন; এই সুদীর্ঘ অবসর পাইয়াও কলিকাতার ইংরাজ দরবার মুচলিকা সম্বন্ধে মতামত প্রদান করিলেন না।[১] এ দিকে বিবি ওয়াট্স্ বেগমমণ্ডলীতে যাতায়াত করিয়া করুণ ক্রন্দনে সকলকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিলেন। বিবি ওয়াট্সের সঙ্গে সিরাজদ্দৌলার মাতার সখিত্ব ছিল। সেই সুবাদে করুণাময়ী সিরাজ-জননী বন্দিদ্বয়ের মুক্তিদানের জন্য সর্ব্বদা অনুরোধ জানাইতে লাগিলেন। অবশেষে মাতৃআজ্ঞা প্রতিপালন করিবার জন্য নিতান্ত অনিচ্ছাক্রমে সিরাজদ্দৌলা ইংরাজদ্বয়কে আপাততঃ মুক্তিদান করিতে বাধ্য হইলেন।
একজন সমসাময়িক ইংরাজ-লেখক এই মুচলিকানামার সমালোচনা করিয়া লিখিয়া গিয়াছেন যে, “ফরাসীদিগের সঙ্গে বিবাদ বিসম্বাদের সম্ভাবনা থাকিতে মুচলিকপত্রের প্রথম সর্ত্ত পালন করা অসম্ভব; বাণিজ্যরক্ষা করিতে হইলে, মধ্যে মধ্যে পদাশ্রিত ইংরাজদিগকে আশ্রয়দান করা আবশ্যক হইয়া থাকে, সুতরাং দ্বিতীয় সর্ত্ত পালন
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বলেন, “কলিকাতা হইতে উত্তর আসিবার সময় দেওয়া হয় নাই।”