পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
সিরাজদ্দৌলা।

একমাত্র ক্রীড়াভূমি, কালে সমগ্র পৃথিবীও তাঁহার জন্য যথেষ্ট বিহারক্ষেত্র দেখাইয়া দিতে পারে না। আজ যে আলিবর্দ্দী স্নেহ পুত্তল পোষাপুল, সময়ে সেই বালকই যে বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজদৌলানামে জগতের নিকট চিরপরিচিত হইবে, তাহা কে জানিত।

 বাল্যকাল বড়ই সুখের কাল; কিন্তু বাল্যকালই আবার ভবিষ্যতের অনেক দুঃখযন্ত্রণার মূল! যেভাবে, যাহার সহবাসে, যেরূপ শাসনে বাল্যজীবন অতিবাহিত হয়, পরজীবনে তাহার দাগ একেবারে বিলীন হয় না। মানব চরিত্র বুঝিতে হইলে, লোকে সেই জন্য বাল্যজীবনের আলোচনা করিয়া থাকে;—আমরা ও বালক সিরাজদ্দৌলার বাল্যজীবনের আলোচনা করিব।

 সিরাজদ্দৌলা মাতামহের স্নেহ পুত্তল, সেই মাতামহ আবার বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার প্রবল প্রতাপান্বিত নবাব;— সুতরাং বালক সিরাজদৌলা যখন যাহা ধরিয়া বসেন, “সাগর ছেঁচিয়া সাত রাজার ধন এক মাণিক” আনিতে হইলেও, মাতামহ তৎক্ষণাৎ তাহা আনিয়া হাজির করেন! তাড়না নাই,—স্নেহ-সম্ভাষণ আছে; শাসন নাই,—আবদার পূরণটুকু পূর্ণমাত্রায় চলিতেছে ইহাতে আবদার দিন দিনই বাড়িয়া চলিতে লাগিল। আবদার পূরণ করিয়া শিশুর মুখে সাময়িক উৎফুল্লতা দেখিতে কোন্ মাতামহের না ইচ্ছা হয়? তাহাতে আবার আলিবর্দ্দীর পুত্রসন্তান নাই।

 শিশু যাহা ধরিয়া মাসে, তাহ প্রায়ই অকিঞ্চিৎকর অথবা নিতান্ত হাস্যস্পদ। সে কখন হাতী চায়, কখন ঘোড়া চায়, কখন বা একেবারে চাঁদখানা হাতের মধ্যে ধরিতে চায়! গরীব লোকে আর কি করিবে? শোলার হাতী, মাটির ঘোড়া কিনিয়া দেয়, এবং “আয় আয় চাঁদ আয়”