ওয়াট্সন্ যে কেবল রণপণ্ডিত তাহাই নহে,—সেকালের ইংরাজদিগের মধ্যে তাঁহার মত সুচতুর রাজনীতিবিশারদ সুলেখকও অল্পই দেখিতে পাওয়া যায়! তিনি যখন অবলীলাক্রমে সিরাজদ্দৌলাকে লিখিতেছেন যে, মুর্শিদাবাদ আক্রমণের প্রস্তাব সর্ব্বৈব মিথ্যা, ঠিক সেই সময়ের কথা উল্লেখ করিয়া লর্ড ক্লাইব মহাসভার সম্মুখে মুক্তকণ্ঠে সাক্ষ্য দিয়া গিয়াছেন যে, “চন্দননগর হস্তগত করিবামাত্র তিনি সকলকে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন যে, সেই পর্য্যন্ত আসিয়াই নিরস্ত হইলে চলিবে না; যখন নবাবের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চন্দননগর অধিকার করা হইল, তখন আরও কিয়দ্দুর অগ্রসর হইয়া সিরাজদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করা হউক।”[১] ক্লাইব বলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার এই সাধুসংকল্পে সকলেই সম্মতিদান করিয়াছিলেন! সুতরাং সিরাজদ্দৌলা যে অঙ্কুরেই ইংরাজের অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়াছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই।[২] কিন্তু দশজনে মিলিয়া তাঁহার মতিভ্রম জন্মাইবার জন্য নানারূপ আয়োজন করিয়া তাঁহাকে বুঝাইয়া দিল যে, ফরাসিরাই যত অনিষ্টের মূল—তাহাদিগকে রাজধানীতে আশ্রয়দান করিয়াছেন বলিয়া ইংরাজের সঙ্গে সন্ধিভঙ্গের উপক্রম হইয়াছে!
সিরাজদ্দৌলা কি জন্য সন্ধি করিয়াছিলেন, ইংরাজেরা তাহার কিরূপ মর্য্যাদা রক্ষা করিতেছিলেন, এবং ফরাসিদিগকেও সিরাজদ্দৌলা কতদুর অবিশ্বাস করিতেন, তাহা তাঁহার লিখিত ২২শে মার্চ্চ দিবসীয় সামরিক লিপিতে প্রকাশিত রহিয়াছে;—সে পত্রখানি এইরূপ:—