প্রদেশের শাসনকর্ত্তা রাজা রামনারায়ণ যেরূপ সাহসী সুচতুর সেইরূপ অকৃত্রিম প্রভুভক্ত; সুতরাং কোনরূপে তাহার সহিত মিলিত হওয়াই সিরাজদ্দৌলার লক্ষ্য হইয়া উঠিল। সরল পথে রাজমহল গমন করিবার চেষ্টা করিলে মীরজাফরের অনুচরবর্গ সহজে তাঁহাকে কারারুদ্ধ করিবার অবসর পাইবে, এই আশঙ্কায় তিনি মহানন্দার ভিতর দিয়া গোপনপথে দীনদরিদ্রের ন্যায় পাটনার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন।[১]
রাজমহলের নিকট কালিন্দী নাম্নী জাহ্নবীর ক্ষুদ্র শাখা নিঃসৃত হইয়া, পুরাতন গৌড় জনপদের উত্তরাংশ দিয়া মালদহের নিকট মহানন্দার সহিত মিলিত হইয়াছে। নাজিরপুরের নিকট ইহার মোহানা ছিল, এখনও তথায় চিহ্ন রহিয়াছে। এই পথ নিরাপদ মনে করিয়া সিরাজদ্দৌলা নিঃশঙ্কচিত্তে অগ্রসর হইতে লাগিলেন।
সিরাজদ্দৌলা আর ক্ষণমাত্র ‘হতইতিগজ’ করিলে, রাজধানীতেই কারারুদ্ধ হইতেন। তিনি যে প্রভাতে মুরশিদাবাদে প্রত্যাগমন করেন, সেই প্রভাতে মীরজাফর এবং মীরণের সঙ্গে দাদপুরের বৃটীশ-শিবিরে পলাশিবিজেতা কর্ণেল ক্লাইবের শুভসন্দর্শন হয়।[২] চতুর ক্লাইব মীরজাফরকে কালাতিপাতের অবসর না দিয়া অবিলম্বে মুরশিদাবাদে উপনীত হইয়া
- ↑ While we were thus happy in our success, Suraja Dowla was travelling in disguise, like a miserable, fugitive, towards Patna, where he hoped once more to appear in arms—Scrafton.
- ↑ Scrafton.
রাজমহলের পথে সিরাজদ্দৌলাকে ধরিবার জন্য লোক লস্কর প্রেরণ করেন। সিরাজদ্দৌলাও জানিতেন যে, তাঁহাকে রাজমহলের পথেই ধরিবার জন্য লোক লস্কর প্রেরিত হইবে। তিনি তজ্জন্য সরল সুপরিচিত স্থলপথ ছাড়িয়া অজ্ঞাতপূর্ব জলপথে মালদহ ঘুরিয়া রাজমহলে উপনীত হইবার আয়োজন করিয়াছিলেন।