করেন। মীরজাফর রাজধানীতে উপনীত হইলেও ক্লাইব সহসা রাজধানীতে পদার্পণ না করিয়া কয়েক দিবস নগরোপকণ্ঠেই কালযাপন করেন;—কেহ কেহ বলেন যে, ইহার মধ্যেও ক্লাইবের গূঢ় উদ্দেশ্য নিহিত ছিল।[১] ক্লাইব যেরূপ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়া গিয়াছেন, তাহাতে কেহই এরূপ তর্ক করিতে পারেন না যে, তিনি অকারণে মীরজাফরকে উত্তেজনা করিয়াছিলেন। ইতিহাসে যাহাই লিখিত হউক না কেন, পলাশির যুদ্ধ যে যুদ্ধাভিনয় মাত্র[২] ক্লাইবের মনে সে বিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ ছিল না। তিনি বুঝিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা পলায়ন করিবার অবসর লাভ করিলে নিশ্চয়ই ইংরাজের চিরশত্রু ফরাসিদলে যোগদান করিয়া ইংরাজদিগের সর্ব্বনাশ সাধন করিবেন। তিনি আত্মপক্ষ সবল করিবার জন্যই যে সিরাজদ্দৌলাকে কারারুদ্ধ করিতে ব্যাকুল হইয়াছিলেন, তাহাতে আর সন্দেহ হয় না। এই সিদ্ধান্ত সত্য হইলে, তাঁহার উত্তেজনাই যে সিরাজদ্দৌলার হত্যাকাণ্ডের মূলকারণ সে বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে না! পরবর্ত্তী ঘটনা দ্বারা এই সিদ্ধান্ত আবার দৃঢ়তর হইয়া উঠে। ক্লাইব নিজেই বলিয়া গিয়াছেন যে,—যদিও কিছু মাত্র আবশ্যক ছিল না, তথাপি মীরজাফর তাঁহার নিকট উপনীত হইয়া এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া জানাইয়াছিলেন যে, সিপাহীদিগের ক্ষেপিয়া উঠিবার উপক্রম দেখিয়া সিংহাসন রক্ষার্থই সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করা প্রয়োজন
পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪০২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৮
সিরাজদ্দৌলা