পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিরাজের সংগ্রামশিক্ষা
৩৯

 সিরাজদ্দৌলা বালক হইলেও এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় অতিমাত্র ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। পিতা এবং পিতামহ উভয়েই শত্রু হস্তে নিহত, মাতা বন্দিনী, সিরাজদ্দৌলা নীরবে এই সকল সংবাদ সহ্য করিতে পারিলেন না; অসিহস্তে মাতামহের পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইলেন। সিরাজ বালক হইলেও বীরবালক, নবাব তাঁহাকে সঙ্গে লইয়াই যুদ্ধযাত্রা করিলেন।

 ইংরাজের ইতিহাসে সিরাজদ্দৌলা কেবল ইন্দ্রিয়পরায়ণ, অকর্ম্মণ্য, জঘন্য রুচির চঞ্চল যুবক বলিয়াই পরিচিত।[১] কিন্তু সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং অসিহস্তে যতবার সম্মুখ যুদ্ধে অগ্রসর হইয়াছেন, বিপদের সংবাদ পাইয়া যতবার ক্ষিগ্রহস্তে অসিচালনা করিয়াছেন, আলীবর্দ্দী ভিন্ন আর কোন নবাবই সেরূপ দৃষ্টান্ত দেখাইয়া যাইতে পারেন নাই। সিরাজদ্দৌলার জীবনে ইহাই প্রথম যুদ্ধযাত্রা নহে। তিনি আশৈশব মাতামহের কণ্ঠালগ্ন হইয়া প্রায় প্রত্যেক যুদ্ধেই শিবিরে পরিভ্রমণ করিতেন। বর্দ্ধমানের নিকট মহারাষ্ট্র সেনা যে সময়ে সদর্পে আলিবর্দ্দীর গতিরোধ করে, তখন সিরাজ নিতান্ত বালক। কিন্তু সেই সময় হইতেই তাঁহাকে নবাব-শিবিরে দেখিতে পাওয়া যায়।[২] তাহার পর প্রায় প্রতি বর্ষেই বর্গীর হাঙ্গামার ইতিহাসের সঙ্গে সিরাজের রণশিক্ষার ইতিহাস সংযুক্ত হইয়া রহিয়াছে। কখন মাতামহের আজ্ঞাবহ হইয়া, কখন বা রাজাজ্ঞায় স্বয়ং সেনাচালনার ভার গ্রহণ করিয়া, এই বীরবালক যে সকল সমরকৌশলের পরিচয় প্রদান করেন,

  1. “His intellect was feeble, his habits low and depraved, his propencities vicious in the extreme.”—Thornton's History of British Empire, Vol. I.
  2. Mustafa's Mutakherin, vol. I. 416.