সিরাজ বাল্যকাল হইতেই ইংরাজ-চরিত্র অধ্যয়ন করিবার অবসর পাইয়াছিলেন। সেকালে নবাব-দরবারে ইংরাজ প্রতিনিধির যাতায়াত ছিল। নগরোপকণ্ঠে বাণিজ্যালয় স্থাপন করিয়া কাশিমবাজারের ইংরাজগণও সর্ব্বদাই ইতস্ততঃ বিচরণ করিতেন। ইহাদের কার্য্যকলাপ দেখিয়া সিরাজের ইংরাজ-বিদ্বেষ দূর হইল না; বরং ইহাদের প্রত্যেক কার্য্যের মধ্যেই গূঢ় অভিসন্ধি দেখিয়া সিরাজদ্দৌলা মনে মনে ইংরাজদিগকে ঘৃণা করিতে শিক্ষা করিলেন। বাল্যসংস্কার সহজে দূর হইবার নহে; বয়োবৃদ্ধিসহকারে সিরাজের সেই বাল্যসংস্কার ক্রমেই ঘনীভূত হইতে লাগিল।
হীরাঝিলের প্রমোদভবন নির্ম্মিত হইবার সময় হইতে সিরাজদ্দৌলা সেই স্থানে নিজ নামানুসারে “মন্সূরগঞ্জ”[১] নামে একটী গঞ্জ স্থাপন করিয়াছিলেন।[২] সেই গঞ্জের সমুদয় আয় তাঁহার করায়ত্ত ছিল; সুতরাং কিসে সেই গঞ্জের উন্নতি ও আয়বৃদ্ধি হইবে, তাহার জন্য সিরাজদ্দৌলা সর্ব্বদাই সাধ্যমত চেষ্টা করিতেন। দেশী বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি না হইলে গঞ্জের শ্রীবৃদ্ধি হইতে পারে না; ইংরাজদিগের প্রকাশ্য ও গুপ্ত বাণিজ্যে দেশীয় ব্যবসায়ীদিগের ক্ষতি হইয়া বিদেশীয়দিগের লাভের পথ যতই বিস্তৃত হইতে লাগিল, সিরাজদ্দৌলা বিদেশী বণিকদিগের উপর ততই অসন্তুষ্ট হইতে লাগিলেন। ফরাশী, দিনামার, ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকদিগের বিনা শুল্কে