পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
সিরাজদ্দৌলা

সিরাজদ্দৌলার ইংরাজ-বিদ্বেষের পরিচয় পাইয়া সময়ে সময়ে স্পষ্টই বলিতেন যে, “দুর্দ্দান্ত সিরাজ ইংরাজদিগের সঙ্গে শীঘ্রই কলহ বিবাদে লিপ্ত হইবে; এবং তাহা হইতেই কালে সিরাজের রাজ্য ইংরাজের করতলগত হইবে!” সিরাজদ্দৌলা কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করিতেন না। তাঁহার বিশ্বাস ছিল যে, সামান্য একটু তাড়া দিলেই বাণিজ্যের খাতাপত্র এবং মাল গুদাম ফেলিয়া ইংরাজ বণিক ভেড়ার পালের মত প্রাণ লইয়া পলায়ন করিবার পথ পাইবে না। সিরাজ একবার ইংরাজদিগকে তাড়াইয়া দিবার জন্য সত্য সত্যই নবাবের অনুমতি চাহিয়াছিলেন। নবাব প্রত্যুত্তরে কেবল এইমাত্র বলিলেন যে, “মহারাষ্ট্র সেনা স্থলপথে যে যুদ্ধানল জ্বালিয়া দিয়াছে, তাহাই নির্ব্বাণ করিতে পারি না, এ সময়ে ইংরাজের রণতরী যদি সমুদ্রে অগ্নিবর্ষণ করে, তাহা হইলে সে বাড়বানল কেমন করিয়া নির্ব্বাণ করিব?[১]

 সেই সিরাজদ্দৌলা যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছেন শুনিয়া ইংরাজদিগের মধ্যে মহা আতঙ্ক উপস্থিত হইল। ইংরাজ তখনও কৃপাভিখারী বণিক মাত্র; নবাব-দরবারে তাঁহাদের পদগৌরব ছিল না। তাঁহারা কেবল অর্থগৌরবে আপনাদিগের বাণিজ্যাধিকার রক্ষা করিয়া আসিতেছিলেন। সেকালে উৎকোচের মহিমা বড়ই প্রবল ছিল। ইংরাজগণ সেই মন্ত্রৌষধির ব্যবস্থা করিয়া নবাবদিগকে ও নবাব-দরবারের পাত্রমিত্রদিগকে সর্ব্বদাই তুষ্ট করিয়া রাখিতেন। নবাবের মনস্তুষ্টি ও শুভদৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সময়ে সময়ে অনেক অপব্যয় করিতে হইত, এবং এত করিয়াও তাঁহারা নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেন না। হুগলীর ফৌজদার তাঁহাদিগের নিকট বৎসরে ২৭০০৲ টাকা পার্ব্বণি আদায়

  1. Stewart's History of Bengal.