পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
সিরাজদ্দৌলা।

এই দোষে যাঁহারা সমধিক লিপ্ত হইয়াছিলেন, তাঁহারা কে, কোন শ্রেণীর লোক, কি উদ্দেশ্যে সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে অনবরত ছায়ার ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেন, ইতিহাস তাহার কোন সংবাদই লিখিয়া রাখে নাই। যাঁহারা প্রধান অপরাধী, তাঁহারা “বেকসুর খালাস” পাইয়াছেন, আর তাঁহাদের মোহজালে জড়িত হইয়া মোহান্ধ বালক একাকী সকলের কলঙ্ক বহন করিয়া লোকসমাজে শত গঞ্জনা সহ্য করিতেছে!

 যাহারা সিরাজদ্দৌলাকে পাপমূর্ত্তিতে লোকসমাজে পরিচিত করিয়া স্বার্থসাধনের পথ সহজ করিয়া তুলিয়াছিল, তাহারা প্রাণপণে কলঙ্ক রটনা না করিলে লোকে অল্পদিনের মধ্যেই এ সকল কথা ভুলিয়া যাইত। সম্রাট আকবরের স্মৃতিমন্দিরের নিকটে ভারতবর্ষের সকল শ্রেণীর হিন্দু মুসলমান এখনও শ্রদ্ধা ভক্তি অর্পণ করিতেছে;—সেই প্রবীণ নরপতির লোহিত প্রস্তরখচিত সুগঠিত দুর্গপ্রাচীরের অভ্যন্তরে মর্ম্মররচিত হর্ম্মতলে কত জাতির, কত ধর্ম্মের, কত কুলকামিনী তাঁহার বিলাস-বাসনা চরিতার্থ করিতেন, ইতিহাসে তাহা অপরিচিত নাই। তেজস্বিনী অভিমানিনী রাজপুতরমণী যোধা বাইয়ের নাম বাঙ্গালীর নিকট অপরিজ্ঞাত নহে। কিন্তু তিনিও আকবরের পাটরাণী হইয়া সিংহাসনের অর্দ্ধাংশভাগিনী হইয়াছিলেন। আগ্রার রাজদুর্গের মধ্যে এখনও “নওয়োজার বাজারের” কক্ষগুলি ধুলি-পরিণত হয় নাই; সেখানে বর্ষে বর্ষে যত কুকীর্ত্তির অভিনয় হইত, তাহাও লোকসমাজে লুক্কায়িত ছিল না। জাহাঙ্গীর বাদসাহ কৌশলক্রমে সের আফগানকে হত্যা করাইয়া, তাঁহার আলেকসামান্যা পরমরূপবতী সহধর্ম্মিণী নুরজাহানকে সিংহাসনে বসাইয়া, তাঁহারই নামে মুদ্রা প্রচলিত করিয়া রাজ্যপালন করিতেন; লোকে পরমসমাদরে পরদার-নিরত সম্রাটের সম্মুখে জানু পাতিয়া উপ