পাতা:সুকান্ত সমগ্র.djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। সেই অরণ্যলঙ্কুল পাহাড়ে বাঘের ভয় অত্যন্ত বেশী। আমরা তাই মন্দিরে আশ্রয় নিলাম। তারপর গেলাম অদূরবর্তী প্রপাত দেখতে।—গিয়ে যা দেখলাম তা আমার স্নায়ুকে, চৈতন্যকে অভিভূত করল। এতদিনকার অভ্যস্ত গতানুগতিক বৃষ্টির ওপর এ একটা সত্যিকারের প্রলয় হিসেবে দেখা দিল। মুগ্ধ সুকান্ত তাই একটা কবিতা না-লিখে পারল না। সে-কবিতা আমার কাছে আছে, ফিরে গিয়ে দেখাব। জোন্‌হা যে দেখেছে, তার ছোটনাগপুর আসা সার্থক। যদিও হুড়ু খুব বিখ্যাত প্রপাত, কিন্তু হুড়ুতে ‘প্রপাত’ দর্শনের এবং উপভোগের এত সুবিধা নেই—একথা জোর করেই বলব। এবং জোন্‌হা যে দেখেছে সে আমার কথায় অবিশ্বাস করবে না। জোন্‌হা সব সময়েই এত সুন্দর, এত উপভোগ্য, তা নয়; এমন কি আমরা যদি তার আগের দিনও পৌঁছতাম তা হলেও এ-দৃশ্য থেকে বঞ্চিত থাকতাম নিশ্চিত। প্রপাত দেখার পর সন্ধ্যার সময় আমরা বুদ্ধদেবের বন্দনা করলাম। তারপর গল্পগুজব করে, সবশেষে নৈশ-ভোজন শেষ করে আমরা সেই স্তব্ধ নিবিড় গহন অরণ্যময় পাহাড়ে জোন্‌হার দূর-নিঃসৃত কলধ্বনি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

 জোন্‌হা সারারাত বিপুল বেগে তার গৈরিক জলধারা নিষ্ঠুরভাবে আছড়ে-আছড়ে ফেলতে লাগল কঠিন পাথরের ওপর, আঘাত-জর্জর জলধারার বুকে জেগে রইল রক্তের লাল আর রুদ্ধ ঘরে শোনা যেতে লাগল আমাদের ক্লান্ত নিঃশ্বাস। প্রহরীর মতো জেগে রইল ধ্যানমগ্ন পাহাড় তার অকৃপণ বাৎসল্য নিয়ে, আর আমাদের সমস্ত ভাবনা ঢেলে দিলাম সেই বিরাটের পায়ে। পরদিন আর একবার দেখলাম রহস্যময়ী জোন্‌হাকে। তার সেই উচ্ছল রূপের প্রতি জানালাম আমার গভীরতম ভালবাসা। তারপর ধীরে-ধীরে চলে এলাম অনিচ্ছাসত্ত্বেও। আসবার সময় যে-বেদনা

৩০৬