পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।


 সবশেষে ম্যাজিকওয়ালা নানাজনের কাছে নানারকমের জিনিস চাহিয়া লইল—চশমা, আংটি, মনিব্যাগ, রূপার পেনসিল প্রভৃতি আট-দশটি জিনিস সকলের সামনে একসঙ্গে পোঁটলা বাধিয়া, শ্যামচাঁদকে ডাকিয়া তাহার হাতে পোঁটলাটা দেওয়া হইল। শ্যামচাঁদ বুক ফুলাইয়া পোঁটলা হাতে দাঁড়াইয়া রহিল—আর ম্যাজিকওয়ালা লাঠি ঘুরাইয়া, চোখটোখ পাকাইয়া বিড়বিড় করিয়া কি-সব বকিতে লাগিল। তার পর হঠাৎ শ্যামচাঁদের দিকে ভ্রকুটি করিয়া বলিল, “জিনিসগুলো ফেললে কোথায়?” শ্যামচাঁদ পোঁটলা দেখাইয়া বলিল, “এই যে।” ম্যাজিকওয়ালা মহা খুশি হইয়া বলিল, “সাবাস ছেলে। লাও, পোঁটলা খুলে যার যার জিনিস ফেরত দাও।” শ্যামচাঁদ তাড়াতাড়ি পোঁটলা খুলিয়া দেখে তাহার মধ্যে খালি কয়েক টুকরা কয়লা আর টিল। তখন ম্যাজিকওয়ালার তম্বি দেখে কে? সে কপালে হাত ঠুকিয়া বলিতে লাগিল, “হায় হায়—আমি ভদ্রলোকদের কাছে মুখ দেখাই কি করে? কেনই-বা ওর কাছে দিতে গেছিলাম? ওহে, ও-সব তামাশা এখন রাখ, আমার জিনিসগুলো একবার ফিরিয়ে দাও দেখি ” শ্যামচাঁদ হাসিবে কি কাঁদিবে কিছুই ঠিক করিতে পারিল না—ফ্যালফ্যাল করিয়া তাকাইয়া রহিল। তখন ম্যাজিকওয়ালা তাহার কানের মধ্য হইতে আংটি, চুলের মধ্যে পেনসিল, আস্তিনের মধ্যে চশমা—এইরূপে একটি-একটি জিনিস উদ্ধার করিতে লাগিল। আমরা হো হো করিয়া হাসিতে লাগিলাম—শ্যামচাঁদও প্রাণপণে হাসিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। কিন্তু সমস্ত জিনিসের হিসাব মিলাইয়া ম্যাজিকওয়ালা যখন বলিল, “আর কি নিয়েছ?” তখন সে বাস্তবিকই ভয়ানক রাগিয়া বলিল, “ফের মিছে কথা। কক্ষনো আমি কিচ্ছু নিই নি।” তখন ম্যাজিকওয়ালা তাহার কোটের পিছন হইতে জ্যান্ত একটা পায়রা বাহির করিয়া

ইস্কুলের গল্প
১১৫