পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 যাহা হউক অনেকদিন ধরিয়া অনেক পরীক্ষার পর সিম্‌সন্ একদিন এক শিশি ক্লোরোফর্ম আনিয়া হাজির করিলেন। সেইদিন আহারের পর দুটি বন্ধুকে সঙ্গে লইয়া তিনি পরীক্ষায় বসিলেন। ক্লোরোফর্মের শিশিতে নাক গুঁজিয়া জোরে জোরে নিশ্বাস টানিতে টানিতে তিনজনেই অজ্ঞান হইয়া পড়িলেন। যখন সিম্‌সনের জ্ঞান হইল তিনি দেখিলেন বন্ধু দুটি তখনো মোহের ঘোরে বেহুঁশ হইয়া আছেন। তিনি উৎসাহে বলিয়া উঠিলেন, “ইথারের চাইতেও চমৎকার।”

 সেইদিন হইতে চিকিৎসকগণ এই সম্মোহন অস্ত্রটিকে আয়ত্ত করিতে আরম্ভ করিয়াছেন এবং তাহার ফলে অস্ত্র-চিকিৎসার বিভীষিকা সাড়ে পনেরো-আনা পরিমাণ দূর হইয়াছে। পূর্বে যে-সকল অবস্থায় ছুরি ছোঁয়াইতে না ছোঁয়াইতে রোগী যন্ত্রণায় মারা যাইত—সেরূপ সাংঘাতিক ক্ষেত্রেও এখন আর রোগীর সে ভয়ের কারণ নাই।

সন্দেশ-জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৪


মরুর দেশে

 ‘মরু' নামটিতেই বলিয়া দেয় যে দেশটি মরা। গাছপালা জীবজন্তু সেখানে বাড়িতে পায় না। মানুষ সেখানে বাস করিতে গেলে দুদিনের বেশি টিকিতে পারে না; এমনি ভয়ানক সে দেশ।

 পৃথিবীর ‘ম্যাপ' যদি দেখ, দেখিবে আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে সাহারার প্রান্ত হইতে চীন সাম্রাজ্যের মাঝামাঝি পর্যন্ত বড়ো-বড়ো দেশ জুড়িয়া Desert (পরিত্যক্ত দেশ) বা মরুভূমি পড়িয়া আছে। তা ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই মানুষের আবাসের আশেপাশেই ছোটো বড়ো ফাঁকা দেশ-সেখানে ঘর নাই বাড়ি নাই, আছে খালি বালির মাঠ অরি বালির ঢিপি। মেরুর কাছে সাইবিরিয়া বা গ্রীনল্যাণ্ড প্রভৃতি শীতপ্রধান দেশেও এমন সব ফাঁকা জায়গা আছে যেখানে বছরের মধ্যে আট মাস ধরিয়া সারাটি দেশ শ্মশানের মতো পড়িয়া থাকে—কেবল বসন্তের কাছাকাছি একটু-আধটু গাছপালার চেহারা দেখা যায়।

 কিন্তু বাস্তবিক ‘মরুভূমি’ বলিতে কেবল সেই-সব দেশকেই বুঝায় যেখানে বারো মাস কেবল বালির স্তুুপ ছাড়া আর কিছু দেখিবার জো নাই-যেখানে শুকনা বালি রৌদ্রে তাতিয়া সমস্ত দেশটাকে একেবারে শুকাইয়া রাখে। সারা বছর সেখানে বৃষ্টি নাই—গাছপালার মধ্যে ক্বচিৎ কোথাও একটু সুবিধা পাইয়া হয়তো দু-দশটি মনসা গাছ মাথা তুলিয়াছে। মরুভূমির ধারে কিনারায় হয়তো দু-চারিটা সাপ বিছা বা গিরগিটি মাঝে মাঝে দেখা যায় কিন্তু যতই ভিতরে যাও ততই দেখিবে জনপ্রাণীর কোনো সাড়া নাই। মাছিটা পর্যন্ত সেখানে শুকাইয়া মরে। চারিদিকে কেবল বালি, তার মধ্যে জম্ভই-বা বাঁচে কি খাইয়া, আর গাছই-বা রস পায় কোথায়? মনসা জাতীয় গাছগুলার পাতা মোটা, তাহাতে রস থাকে অনেক বেশি—আর তাদের ছাল পুরু, তাহাতে রসটাকে তাড়াতাড়ি শুকাইতে দেয় না। তাহারা বালির নীচে সরস মাটিতে প্রাণপণে শিকড় বসাইয়া কোনোরকমে বাঁচিয়া থাকে।

নানা নিবন্ধ
১৮৭