পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভুঁইফোঁড়

 কেঁচোরী যে মাটি খুঁড়ে চলে তা তোমরা সকলেই জান, কিন্তু কেমন করে চলে জান কি? কেঁচোর শরীরটা একটা লম্বা ফাঁপা চোঙার মতো, তার দুইদিকেই ফুটো। একদিক দিয়ে কেঁচো মাটি গিলতে থাকে, আর-একদিক দিয়ে সেই মাটি সরু সুতোর মতো হয়ে ক্রমাগতই বেরিয়ে যায়। এমনি অদ্ভুতরকম করে মাটি খেয়ে খেয়ে আর সরিয়ে সরিয়ে কেঁচোরা মাটির মধ্যে ঢোকে।

 কেঁচোর বিদ্যেটাকে আজকাল মানুষও শিখে নিয়েছে! মানুষে ভাবি ভারি কেঁচো-কল বানিয়ে, তা দিয়ে মাটির মধ্যে বড়ো বড়ো সুড়ঙ্গ কেটে ফেলে। ইউরোপ আমেরিকার অনেক শহরের তলায় মাটির নীচে যে-সমস্ত রেল রাস্তার সুড়ঙ্গ থাকে, সেগুলোর অধিকাংশই কেঁচো-কল দিয়ে কাটানো হয়।

 কেঁচো-কল কিরকম জানো? প্রকাণ্ড মজবুত লোহা-বাঁধানো নলের মতো জিনিস, তার মধ্যে ভারী কলকব্জা। নলের মাথাটা কলের ধাক্কায় ক্রমাগত জমাট মাটির মধ্যে ঢুঁ মেরে এগিয়ে চলতে চায়। মাটি আর সরবার পথ পায় না, কাজেই সে হাঁ-করা চোঙার ভিতর দিয়ে নলের মধ্যে ঢুকে কলের পিছন দিকে বেরিয়ে এসে জমতে থাকে। এমনি করে কেঁচো-কল এগিয়ে চলে আর আপনি আপনি সড়ঙ্গ কাটা হয়ে যায়। কলের সঙ্গে সঙ্গে লোকজন সব চলতে থাকে, তারা ক্রমাগতই মাটি সরায়, রেল বসায়, আর সুড়ঙ্গের ভিতরটাকে মজবুত লোহায় মোড়া পাকা গাঁথনি দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়। বড়ো-বড়ো এক-একটা কেঁচো কল এক-এক দমে পাঁচ-ছয় হাত এগিয়ে যায়। তার পর আবার কলকব্জা গুটিয়ে দম নিতে থাকে। এমনি করে নরম মাটিতে সারাদিনে হয়তো একশো হাত সুড়ঙ্গ কাটে।

 লণ্ডন শহরের পঁচিশ-ত্রিশ বা চল্লিশ হাত নীচেকার মাটি খুব নরম। কেঁচোকলের ঠেলায় পড়লে সে মাটি কচ্‌কচ্ করে কেটে যায়। কিন্তু মাটি যদি ইটের মতন শক্ত হয়-যদি পাথরের মধ্যে সুড়ঙ্গ কাটা দরকার হয় তা হলে আর কেঁচোকলের শক্তিতে কুলায় না। তখন অন্যরকম ভুঁইফোড় কলের ব্যবস্থা করতে হয়। মাটি কাটার চাইতে পাথর কাটার হাঙ্গামা অনেক বেশি। কতরকম সাংঘাতিক কল দিয়ে পাথরকে কেটেকুটে খুঁড়েফঁড়ে খুঁচিয়ে পিটিয়ে তবুও যখন পারা যায় না—যখন যন্ত্রের মুখ ক্রমাগতই ভোঁতা হয়ে যায়, কলের ফলা বারেবারেই ভাঙতে থাকে, সারাদিন পরিশ্রমের পর সুড়ঙ্গ পাঁচ হাত এগোয় কিনা সন্দেহ-তখন বোমাবারুদ ফুটিয়ে, পাথর উড়িয়ে পথ করতে হয়। এমন পরিশ্রমের কাজ খুব কমই আছে। এক-একটা ছোটোখাটো পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ বসাতে কত সময়ে বছরের পর বছর কেটে যায়।

 লণ্ডনের যে সুড়ঙ্গ-রেল, তাকে সেদেশে ‘টিউব' (Tube) বলে। শহরের মাঝে মাঝে টিউব স্টেশন থাকে, সেখানে ঢুকে টিকিটঘরের জানালা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়, অথবা

নানা নিবন্ধ
২৬৭