পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুখের সামনে থেকেই সেই বাচ্চাটাকে কেড়ে নিয়ে গেল যে কুকুরগুলো ভয়ে কিছুই করতে সাহস পেল না—দূরে শিকারীরা পর্যন্ত তার তেজ দেখে আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

 বিপদে পড়লে বেবুনেরা পিছনের পায়ে ভর করে খাড়া হয়ে বসে—শত্রুকে হাতের কাছে পেলেই নখ দিয়ে খাচে টেনে মুখের কাছে নিয়ে এসে, তার পরেই প্রচণ্ড এক কামড়। কামড়ের জোরে হাড়গোড় পর্যন্ত অনায়াসেই গুঁড়িয়ে দিতে পারে। নখ দাঁতই হচ্ছে বেবুনের প্রধান অস্ত্র কিন্তু দরকার হলে তারা পাথর ছুড়তেও জানে। বড়ো-বড়ো পাথর গড়িয়ে শক্রর মাথায় ফেলতে তারা খুব ওস্তাদ।

সন্দেশ—আষাঢ়, ১৩২৬
সিংহ শিকার

 আফ্রিকা হল সিংহের দেশ। ইউরোপ আমেরিকার বড়ো-বড়ো শিকারীরা সেখানে বন্দুক নিয়ে দলেবলে সিংহ শিকার করতে যান। তারা মনে করেন, যতরকম শিকার আছে তার মধ্যে সিংহ শিকার খুব একটা বড়ো ব্যাপার। কারণ তাতে শিকারীর সাহস এবং বাহাদুরির পরিচয়টা ভালো করেই পাওয়া যায়। যে শিকারী সিংহ মেরেছে লোকে তাকে ওস্তাদ শিকারী বলে মানে। সিংহ শিকারের বিপদ খুব বেশি। অজিকাল বন্দুকের এত যে উন্নতি হয়েছে, তবুও এখনো কত শিকারী সিংহের হাতে প্রাণ হারান। তিন-চারটা সাংঘাতিক গুলি খাবার পরেও একশো গজ দৌড়ে এসে সিংহ তার শিকারীকে শিকার করেছে, এমন ঘটনার কথাও শোনা যায়। তার মধ্যে একটি গুলি সিংহের হৃৎপিণ্ড ফুটো করে বেরিয়ে গিয়েছিল, তবু মরবার আগে সে তার মরণকামড়টি না দিয়ে ছাড়ে নি। তা হলে ভাব সিংহ কি জিনিস!

 এমন যে সিংহ তাকে আফ্রিকার ‘মাসাই’ ও ‘নান্দি’ জাতের নিগ্রোরা বল্লম দিয়ে শিকার করে থাকে। প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট আমেরিকার যুক্তরাজ্যের সভাপতি এবং অসাধারণ মনস্বী লোক বলে সকল দেশে পরিচিত, কিন্তু শিকারী হিসাবেও তাঁর প্রতিপত্তি বড়ো কম নয়। তিনি নান্দিদের সিংহ শিকার স্বচক্ষে দেখে তার যে বর্ণনা লিখে গিয়েছেন, তা পড়লে অবাক হতে হয়।

 নান্দিদের শিকার দেখবার জন্য তিনি একদিন আফ্রিকার জঙ্গলে দলেবলে সিংহের খোঁজে বেরিয়েছিলেন। কথা ছিল, সিংহ পাওয়া গেলে নন্দিরা শিকার করবে; সাহেবরা কেউ সে শিকারে যোগ দেবেন না; কিছু বলতে পারবেন না। তারা কেবল দুরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন। ঝোপ জঙ্গল ঘেঁটে অনেক খোঁজার পর প্রকাণ্ড এক সিংহ পাওয়া গেল। তেমন সিংহ সচরাচর মেলে না। রুজভেট লিখেছেন, সিংহটাকে দেখে তাদের শিকার করবার লোভ জেগে উঠছিল, কিন্তু তা হলে তাদের কথা রক্ষা হয় না, আর নান্দিদের শিকারটাও দেখা হয় না, তাই তাঁরা দলেবলে সিংহটাকে ঘিরে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। নান্দিরা একটু পিছনে পড়েছিল, দেখতে দেখতে তারা এসে হাজির হল। এক হাতে বল্পম, আর এক হাতে ঢাল—বিশাল দেহটি যেন কালো পাথরে

জীবজন্তুর কথা
৩৫৭