পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
টিয়াপাখির বুদ্ধি।

 এক ফরাসি ভদ্রলোকের একটা কুকুর আর একটা টিয়াপাখি ছিল। কুকুরটাকে তিনি নানারকম খেলা আর কাজ শিখিয়েছিলেন। 'বাইরে যাও', 'দোকানে যাও’, ‘খাবার আনো’ বলে তিনি যখন যেমন হুকুম করতেন, কুকুরটা ঠিক মতন তার হুকুম তামিল করত। টিয়াপাখিটা কিন্তু কিছু কাজ করতে শেখে নি। সে কেবল সব সময় বকর বকর করে কথা বলত আর কুকুরটার উপর সর্দারি করত। কুকুর বেচারা হয়তো ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে হঠাৎ টিয়াপাখিটা চোখ পাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল, “এইও, বাইরে যাও”- কুকুরেরও হুকুম শুনে অভ্যাস- সে ভয়ে ভয়ে লেজ গুটিয়ে দরজার দিকে রওনা হত। তখন আবার টিয়াপাখিটা ঠিক তার মনিবের মতো শিস্ দিয়ে তাকে ডেকে আনত।

 সেই ভদ্রলোকটি কুকুরটাকে প্রায়ই রুটিওয়ালার দোকানে 'কেক্’ আনবার জন্য পাঠাতেন। কুকুরটাকে সকলেই খুবই চিনত সুতরাং সে টুকরি মুখে নিয়ে দোকানে অসিলেই রুটিওয়ালা টুকরির মধ্যে কেক্ পুরে দিত আর তার মনিবের নামে হিসাব লিখে রাখত। একদি ভদ্রলোকটি হিসাব করতে গিয়ে দেখেন যে তার হিসাবের সঙ্গে দোকানের হিসাব মিলছে না। তিনি যতবার কুকুরটাকে পাঠিয়েছেন-দোকানীর হিসাব তার চাইতেও বেশি লেখা হয়েছে। কয়েকদিন পর্যন্ত এর কারণ কিছু বোঝা গেল না। তার পর তিনি একদিন দেখেন কি, কুকুরটা শুয়ে আছে এমন সময় টিয়াপাখিটা হঠাৎ বলে উঠল, “টুকরি আনো।” কুকুরটা একটু উঠে টুকরি নিয়ে এল। টিয়াপাখি বলল, “দোকানে যাও।” কুকুর বেচারা ইতস্তত করতে লাগল, তাই দেখে সে আবার চীৎকার করে বলল, “এইও, দোকানে যাও।” কুকুর বেচারা আর কি করে? সে দোকানে গিয়ে দু’মিনিটের মধ্যে খাবার এনে পাখিটার সামনে রেখে লেজ নাড়তে লাগল, ইচ্ছাটা সেও কিছু ভাগ পায়, কিন্তু টিয়াপাখি “বাইরে যাও” বলে এক ধমক দিয়ে তাকে তাড়িয়ে, নিজেই সবটা খাবার খেতে লাগল।

 তখন ভদ্রলোকটি বুঝতে পারলেন যে দোকানীর হিসাবে কেন বেশি লেখা হয়।

সন্দেশ-পৌষ, ১৩২১
আন্যান্য গল্প
৩৬৯