পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ও বললে, এইবার মগজ বদল করার পরীক্ষা হবে।

 মগজ বদল হবে কী ক’রে।

 বিজ্ঞানের বাহাদুরি। জু থেকে চেয়ে নিলে একটা বনমানুষ। বের করলে তার মগজ। আর সে-র মাথার খুলি খুলে ফেললে। তার মধ্যে বাঁদরের মগজ পুরে দিয়ে খড়ির পলেস্তারা দিয়ে মাথাটা বেঁধে রাখলে পনেরো দিন। খুলি জুড়ে গেল। বিছানা ছেড়ে সে যখন উঠল, তখন সে এক বিষম কাণ্ড। যাকে দেখে তার দিকে দাঁত খিচিয়ে কচীমিচি করে ওঠে। নর্স দিলে দৌড়। ডাক্তার সাহেব বজ্রমুঠিতে ওর দুই হাত চেপে ধরে জোর গলায় বললেন, স্থির হয়ে বোসো এইখানে। ও হুঙ্কারটা বুঝলে কিন্তু ভাষাটা বুঝলে না। ও চৌকিতে বসতে চায় না, ও লাফ দিয়ে উঠে বসতে চায় টেবিলের উপরে। কিন্তু লাফ দিতে পারে না, ধপ্ ক’রে পড়ে যায় মেজের উপর। দরজাটা খোলা ছিল, বাইরে ছিল একটা অশথ গাছ। সবার হাত এড়িয়ে ছুটল সেই গাছের দিকে। ভাবলে এক লাফে চড়তে পারবে ডালে। বারবার লাফ দিতে থাকে অথচ ডালে পৌঁছতে পারে না, ধপ্ ক’রে পড়ে যায়। বুঝতেই পারে না কেন পারছে না। রেগে রেগে ওঠে। ওর লক্ষ দেখে চারদিকে মেডিকেল কলেজের ছেলেরা হো হো ক’রে হাসতে থাকে। ও দাঁত খিচিয়ে তেড়ে তেড়ে যায়। একজন ফিরিঙ্গি ছেলে গাছতলায় পা ছড়িয়ে বসে কোলে রুমাল পেতে রুটি মাখন দিয়ে কলা দিয়ে আরামে খাচ্ছিল, ও হঠাৎ গিয়ে তার কলা ছিনিয়ে নিয়ে দিলে মুখে পুরে; ছেলেটা রেগে ওকে মারতে যায়, বন্ধুদের হাসি কিছুতে থামতে চায় না।

 মহা ভাবনা পড়ে গেল ওর জিন্মে নেবে কে। কেউ বললে, পাঠাও জু-তে, কেউ বললে, অনাথ-আশ্রমে। জু-র কর্ত্তা বললে এখানে মানুষ পোষা আমাদের বরাদ্দে নেই, অনাথ-আশ্রমের অধ্যক্ষ বললে এখানে বাঁদর পোষা আমাদের নিয়মে কুলোবে না।

৮৭