পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 এই ব’লে ধুপধাপ ধুপধাপ ক’রে লাফাতে লাগল, শেষকালে ডিগবাজি খেলা শুরু করলে আমার কার্পেটের উপর, জলের মধ্যে শুশুকের মতো।

 করছ কী তুমি।

 দাদা, একেবারে বাদশাহী থামা থেমেছিলুম, আর কিছুতেই থামছিনে। মারধোর যদি করে সেও লাগবে ভালো। আস্ত কিলের যোগ্য পিঠ নেই যখন জানতে পারলুম, তখন সাতকড়ি পণ্ডিতমশায়ের কথা মনে ক’রে বুক ফেটে যেতে চাইল, কিন্তু বুক নেই তো ফাটবে কী। কই মাছের যদি এই দশা হোত তাহোলে বামুনঠাকুরের হাতে পায়ে ধরত তাকে একবার তপ্ত তেলে এপিঠ ওপিঠ ওলটাতে পালটাতে। আহা, যে পিঠখানা হারিয়েছে সেই পিঠে পণ্ডিতমশায়ের কত কীলই খেয়েছি, ইঁট দিয়ে তৈরি খইয়ের মেওয়াগুলোর মতো। আজ মনে হয় উঃ—দাদা, একবার কিলিয়ে দাও খুব ক’রে দমাদম। -বলে আমার কাছে এসে পিট দিলে পেতে।

 আমি আঁৎকে উঠে বললুম, যাও যাও, সরে যাও।

 ও বললে, কথাটা শেষ ক’রে নিই। একখানা গা খুঁজে খুঁজে বেড়ালুম গায়ে গায়ে। বেলা তখন তিন পহর। যতই রোদে বেড়াই কিছুতেই রোদে পুড়ে সারা হচ্চিনে, এই দুঃখটা যখন অসহ্য এমন সময় দেখি আমাদের পাতুখুড়ো মুচিখোলার বটগাছতলায় গাঁজা খেয়ে শিবনেত্র। মনে হোলো তার প্রাণপুরুষটা বিন্দু হয়ে ব্রহ্মতালুর চূড়োয় এসে জোনাক পোকার মতো মিট্‌মিট্‌ করছে। বুঝলুম হয়েছে সুযোগ, নাকের গর্ত্ত দিয়ে আত্মারামকে ঠেসে চালিয়ে দিলুম তার দেহের মধ্যে, নতুন নাগরা জুতোর ভিতরে যেমন করে পা-ট। ঠেসে গুজতে হয়। সে হাঁপিয়ে উঠে ভাঙা গলায় ব’লে উঠল, কে তুমি বাবা, ভিতরে জায়গা হবে না। তখন তার গলাটা পেয়েছি দখলে, বললুম, তোমার হবে না জায়গা, আমার হবে। বেরোও তুমি।

 সে গোঁ গোঁ করতে করতে বললে, অনেকখানি বেরিয়েছি, একটু বাকি। ঠেলা মারে। দিলুম ঠেলা, হুস্‌ ক’রে গেল বেরিয়ে।

৭১