মুখবন্ধ
সোক্রাটীস গ্রীসের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ। বাঙ্গলা ভাষায় তাঁহার একখানিও জীবনচরিত নাই। এই অভাব পরিপূরণের উদ্দেশ্যে সাত বৎসর পূর্ব্বে আমি তাহার জীবনী লিখিত আরম্ভ করি; কিন্তু এই শ্রমসাধ্য কার্য্যে হস্তার্পণ করিয়া কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়াই উপলব্ধি করিলাম, প্রস্তাবিত গ্রন্থের ভূমিকাস্বরূপ গ্রীকসভ্যতার একটা প্রাঞ্জল বিবরণ না থাকিলে সোক্রাটীস পাঠকগণের নিকটে সমুচিত সমাদর প্রাপ্ত হইবেন না; কেন না, কোনও মহাপুরুষ যে দেশে ও যে কালে আবির্ভূত হন, এবং যে আব হাওয়ার মধ্যে লালিতপালিত ও বর্দ্ধিত হইয়া তাহার হৃদয়মন পূর্ণ পরিণতি লাভ করে, তাহার সহিত পরিচয় বিনা আমরা তাঁহাকে বুঝিতে পারি না, সুতরাং তৎপ্রতি সুবিচার করিতেও সমর্থ হই না। সোক্রাটীসের পারিপার্শ্বিক অবস্থানিচয়ের বাস্তব চিত্র অঙ্কিত করিবার মানস হইতেই গ্রীক জাতি ও গ্রীক সভ্যতার বিবরণ-সংবলিত এই দীর্ঘ ভূমিকার উৎপত্তি হইয়াছে। বাঙ্গলা সাহিত্যে এই জাতীয় কোনও পুস্তক থাকিলে আমি ভূমিকা লিখিবার আয়াস হইতে অব্যাহতি পাইতাম। কিন্তু গ্রীক সভ্যতা সম্বন্ধে বঙ্গদেশে এ যাবৎ অতি অল্পই আলোচনা হইয়াছে। একমাত্র ৺প্রফুল্লচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় “গ্রীক ও হিন্দু” নামক পুস্তকে উহার অনুশীলন করিয়াছেন; কিন্তু ঐ গ্রন্থ প্রায় চল্লিশ বৎসর পূর্বে লিখিত হইয়াছিল; সুতরাং নবীনতম ঐতিহাসিক গবেষণা লেখকের সিদ্ধান্তগুলির অনুকূল নহে; এবং গ্রীক সভ্যতার ধারাবাহিক বিবরণ প্রদান করাও তাঁহার অভিপ্রায় ছিল না। তদুপরি, পুস্তকখানি এখন দুষ্প্রাপ্য, কারণ দ্বিতীয় সংস্করণের পরে উহা আর মুদ্রিত হয় নাই। গ্রীক জাতি ও গ্রীক সভ্যতার প্রামাণিক বৃত্তান্ত হয় তো শিক্ষিত সমাজে অনাদৃত হইবে না, এই আশাও আমাকে এই ভূমিকা প্রণয়নে প্ররোচিত করিয়াছে। আমি ইহাতে প্রধানতঃ পঞ্চম শতাব্দীর গ্রীক সভ্যতার স্থল